চিরন্তন ব্যানার্জি :- মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরই জট কাটলো টলিপাড়ায়। বুধবার থেকেই আবার শুরু হচ্ছে টলিপাড়ায় শুটিং। মঙ্গলবার দুপুরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রযোযক, পরিচালক, অভিনেতাদের দীর্ঘ বৈঠকের পর বিকেলে বৈঠকে বসে ফেডারেশন। সন্ধ্যায় টেকনিশিয়ানস্ স্টুডিয়োয় পরিচালকেরা আলাদা বৈঠকে বসেন। তার পরেই সমস্যার সমাধান হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, বুধবার থেকেই টলিপাড়া আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। শুরু হবে যাবতীয় শুটিং।
মঙ্গলবার পরিচালক এবং ফেডারেশন কর্তারা প্রথমে আলাদা আলাদা বৈঠকে বসেন। পরিচালকদের তরফে উপস্থিত ছিলেন গৌতম ঘোষ, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, দেবালয় ভট্টাচার্য প্রমুখ। বৈঠক শুরু হয় রাত ৮টা নাগাদ। কিছু ক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত হন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং দেব। বৈঠক শেষে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁরা জানিয়ে দেন, বুধবার থেকে টলিপাড়ায় শুটিং শুরু হবে। গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা কৃতজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি আমাদের সময় দিয়েছেন এবং আমাদের সমস্যা শুনেছেন। সমাধানের পথও বলে দিয়েছেন।’’
অন্যদিকে, মুুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে জট কাটার কথা জানিয়েছে ফেডারেশনও। ফেডারেশনের তরফে স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে জট কাটল। বুধবার থেকে শুরু শুরু হচ্ছে। কিছু বিষয় পর্যালোচনার জন্য কমিটি গড়তে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
জানা যাচ্ছে, দুপুরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, কোনও পরিচালককে ব্যান করার ক্ষমতা নেই ফেডারেশনের, এদিন একথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দুই পক্ষকে নিয়ে একটা রিভিউ কমিটি তৈরির নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। নতুন কমিটিতে থাকবেন গৌতম ঘোষ, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং দেব। সেখানে ফেডারেশনের সমস্ত নিয়মনীতি নতুন করে পর্যালোচনা এবং সংস্কার করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, নভেম্বর মাসের মধ্যে এই সংক্রান্ত নতুন নিয়ম কার্যকর করতে হবে। সূত্রের খবর, নতুন আইনে ছবির বাজেট, রাজ্যের বাইরে থেকে আসা শুটিং ইউনিটের কাছে বেশি টাকা দাবি না করা-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার করা হবে।
সাংসদ-অভিনেতা দেব বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন আর কাউকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না। জরিমানা হতে পারে। কিন্তু কারও অন্নসংস্থান ছিনিয়ে নেওয়া যাবে না।’’ প্রসেনজিৎ জানান, শুধু পরিচালক নন, সমস্ত গিল্ডের আইনের ক্ষেত্রেই পুরনো নিয়ম নতুন করে সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বা ওরা নয়, সবটাই আমরা। আমরা সকলে মিলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কিসে ভাল হয়, তার জন্যই চেষ্টা চালিয়ে যাব।’’
অন্যদিকে, আর্টিস্ট ফোরামও মঙ্গলবার একটি বিবৃতি জারি করে পরিচালকদের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে, একই সঙ্গে গত দু’দিন শুটিং বন্ধ থাকার জন্য শিল্পীদের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি তারা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যে কমিটি তৈরি হবে, তার অংশীদার হওয়ারও দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের দাবি, শিল্পীদের যেন অবজ্ঞা না করা হয়।
মঙ্গলবার পরিচালকদের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে ফোন করেছিলেন। আমরা কিছু নির্দেশ পেয়েছি। আগামী দিনে আমরা সেই মতো কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব।’’ কিন্তু রাহুলকে তাঁরা পরিচালক হিসেবে মেনে নিচ্ছেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট করেনি ফেডারেশন। স্বরূপ বলেন, ‘‘কাল আমাদের সদস্যদের বৈঠকে এই প্রসঙ্গে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’ কিন্তু অন্যদিকে পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, রাহুল মুখোপাধ্যায়ই ছবিটি পরিচালনা করবেন। ছবির শুটিং শুরু হবে এক সপ্তাহ পরে।
Be the first to comment