চিরন্তন ব্যানার্জি:-
নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী রইল কল্লোলিনী। শহর কলকাতার রাজপথে অনেক আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে জনগণ। কিন্তু, প্রতিবাদ হচ্ছে রাস্তা দখল করে, অথচ সাধারণ মানুষের অসুবিধা না করে। আবার বিক্ষোভ অবস্থানের পর সেই আন্দোলনকারীরাই রাস্তা যেটুকু নোংরা হয়েছিল, তাও ঝাঁটা হাতে আগের মতোই সাফসুতরো করে দিচ্ছেন। এমন দৃশ্য ভারতে সম্ভবত কলকাতাই প্রথম সৃষ্টি করল।
আরজি করের বিচার চেয়ে পথে নেমেছে আমজনতা। অন্যদিকে, সহপাঠীর নির্মম খুনের বিচার চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরাও। সেই সূত্রে মঙ্গলবার দুটি অন্য নজিরের সাক্ষী হল কলকাতা। রাস্তা ঘিরে মানুষকে বিপদে না ফেলেও যে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যায়, সেই নজির গড়লেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে আমজনতা। আরজি করের বিচার চেয়ে সোমবার বিকালে পাটুলি থেকে উল্টোডাঙা ইএম বাইপাসে মানব বন্ধনের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। রাস্তার একপাশে হাতে হাত রেখে প্রায় ১৭ কিলোমিটার রাস্তা মানব বন্ধনে শামিল হন তাঁরা। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তাঁদের সঙ্গে মানবন্ধনে যুক্ত হন শহরের আমজনতাও। রাস্তার একদিকে প্রতিবাদীদের কণ্ঠে স্লোগান উঠছে, ‘আমার স্বর, তোমার স্বর, আরজি কর আরজি কর’, তার পাশ দিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছে যানবাহনও। আন্দোলনকারীদের কথায়, “মানুষকে বিপদে ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট করব কেন? তাই নিজেদের প্রতিবাদটুকু তুলে ধরতে রাস্তার একপাশকেই আমরা বেছে নিয়েছি কারও অসুবিধা না করে।”
অন্যদিকে, সহপাঠীর খুনের বিচার চেয়ে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। শুরু থেকেই রাজনীতির ছোঁঁয়া লাগতে দেননি তাঁদের মঞ্চে। আর সোমবার থেকে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে লালবাজার থেকে ৫০০ মিটার দূরে রাস্তায় বসেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সাধারণত, রাজনৈতিক দলের জমায়েতে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি ঘিরে সংশ্লিষ্ট জায়গাটি নোংরা হয়ে যায়। খাবার প্যাকেট, জলের বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়। চেনা সেই ছবি বা ধারণা বদলে দিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। টানা ২২ ঘন্টা অবস্থান বিক্ষোভের পর কলকাতা পুলিশ কমিশনারে সাথে দেখা করার পর অবস্থান তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সকলে সর্বসম্মত হতেই ঝাঁটা হাতে রাস্তা পরিষ্কারে নেমে পড়তে দেখা গেল জুনিয়র চিকিৎসকদের। কে বলবে এই হাতেই তাঁরা ধরেন টেথোস্কোপ! কেন? জুনিয়র চিকিৎসকদের কথায়, “এটাও তো আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। টানা ২৪-২৫ ঘণ্টা ধরে এই রাস্তায় আমরা বসেছি, প্রয়োজন বিশেষে শুকনো খাবার খেয়েছি। তার প্যাকেট, ফাঁকা জলের বোতল তো এভাবে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেলে রাস্তা নোংরা হবে। তাই যতটা সম্ভব আমরা নিজেরাই পরিষ্কার করে দিচ্ছি।”
একই দিনে শহরের দুদিকে আরজি করের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের এই অভিনব নজির দেখে আপ্লুত আমজনতাও। তাঁদের কথায়, ‘এদের থেকে শেখা উচিত রাজনৈতিক দলের নেতা, নেত্রীদের।’
Be the first to comment