যিশুর জন্মদিনেই চলে গেলেন কলকাতার যিশু। প্রয়াত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন তিনি। গত ৯ তারিখ তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার, হার্ট অ্যাটাক হয় বলে জানান চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার, বেলা বারোটা পঁচিশ নাগাদ হাসপাতাল থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তবে, অসুস্থতার আগে পর্যন্তও বার্ধক্য তাঁর মস্তিষ্কে ছাপ ফেলতে পারেনি। সাম্প্রতিক সাহিত্য ও রাজনীতি নিয়েও তিনি সজাগ ছিলেন। তাঁর লেখা ‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল’ বাংলা যুব মানসে গভীর ছাপ ফেলে। ১৯৭৪ সালে ‘উলঙ্গ রাজা’র জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
নীরেন্দ্রনাথের ‘কলকাতার যিশু’ আজও সাহিত্যে, লেখায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার হয়। তাঁকে ২০০৭ -এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ডক্টরেট দেওয়া হয়। ছোটোদের বহুল প্রচারিত ম্যাগাজিনে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। কাব্য চর্চার পাশাপাশি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক ও ভ্রমণ-কাহিনিকার। শুধু তাই নয়, আধুনিক বাংলা ভাষা ও বানানের তিনি ছিলেন বিশেষজ্ঞ। বাংলা সাংবাদিকতার ভাষাকে আধুনিক, কেতা দুরস্ত চেহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
উলঙ্গ রাজা তাঁর অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্হ। এই কাব্যগ্রন্হ লেখার জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমির সাথে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন।নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরের চন্দ্রগ্রামে।
তাঁর শৈশবের পুরোটাই কেটেছে পূর্ববঙ্গে যা বর্তমান বাংলাদেশ, ঠাকুরদা আর ঠাকুমার কাছে। পরে কবির ঠাকুরদা কর্মজীবন কাটিয়েছেন কলকাতায়। কর্মজীবন শেষে ৫০ বছর বয়সে কলকাতার পাট চুকিয়ে বাংলাদেশের ফরিদপুর বাড়ি চান্দ্রা গ্রামে চলে আসেন। তার বাবা কলকাতাতেই ছিলেন। কলকাতার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করতেন।
দুই বছর বয়সে কবির মা বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান। কবি থেকে যান তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে। গ্রামে কাটিয়েছেন ইচ্ছেমতো দৌড়ঝাঁপ করে। কখনো গাছে উঠছেন; কখনো আপন মনে ঘুরেছে গ্রামের এই প্রাপ্ত থেকে অন্যপ্রাপ্তে। চার বছর বয়সে কবির কাকিমা বলছিলেন, ’তুই তো দেখছি কবিদের মতো কথা বলছিস!’ সেই সময়েই মুখস্থ করেছিল গ্রামে কবিয়াল, কবিগান,রামায়ণ গান। গ্রামের দিনগুলো খুব সুন্দর কেটেছে,তাই তিনি এ গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় যেতে চাইতেন না। তবে ঠাকুরদার মৃত্যুর পর গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন।পরে আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন।তার বিখ্যাত কবিতা অমলকান্তি।
নীরেন্দ্রনাথের লেখা, ‘কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ বাংলা সাংবাদিকতার ছাত্রছাত্রীদের অবশ্য পাঠ্য। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দুই কন্যা ও এক পুত্র রয়েছেন। তাঁর কন্যা সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিউলি সরকার কলেজের অধ্যাপিকা। গত ২৩ জানুয়ারি স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে কার্যত ভেঙে পড়েন কবি। বাড়ি বাঙুরের হলেও, দুই কন্যার বাড়িতে মাঝে মধ্যেই থাকতেন নীরেন্দ্রনাথ। দক্ষিণ কলকাতায় কন্যার বাড়িতেই গত ৯ ডিসেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁ মৃত্যুতে শোকাহত সাহিত্য মহল থেকে শুরু করে বাংলা সাহিত্যপ্রেমী মানুষ।
ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Be the first to comment