প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনেই সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে কর্তব্যর পাঠ পড়িয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। এ প্রসঙ্গে বলার সময়ে সকলকেই যে নিজেদের লক্ষণরেখা মেনেই চলতে হবে, সেই পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। শনিবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে প্রধানমন্ত্রীর পৌরহিত্যে দেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতিদের সম্মলনের শুরুতেই প্রধান মাম। বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে মমতাকে এদিন সবথেকে আগ্রাসী ভূমিকায় দেখেছেন সকলেই।
এদিন সকালে সম্মেলনের শুরুর দিকেই প্রধান বিচারপতি রামানা বলেছেন, সংবিধানে গণতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার বন্টন করা হয়েছে। প্রশাসন, আইনসভা ও বিচারব্যবস্থা সকলকেই নিজেদের কর্তব্য পালনের সময় লক্ষণরেখার উপর নজর দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি রামানা এদিন দেশে জনস্বার্থ মামলাগুলি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উঠেছে বলেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “জনস্বার্থ মামলাগুলি বর্তর্মানে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আধিকারিকদের ধমকানোর মাধ্যম হয়ে উঠেছে জনস্বার্থ মামলা। সেগুলি এখন রাজনৈতিক ও কর্পোরেট বিরুদ্ধে ব্যবহারকারী অস্ত্র হয়ে উঠেছে।”
একই সুরে সম্মেলনের আলোচনা পর্বে এনিয়ে সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই জনস্বার্থ মমলাগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তাতে আদালাতের ঘাড়ে আরও মামলার বোঝা চাপছে বলেও প্রধান বিচারপতির সামনে অভিযোগ করেছেন তিনি।
পাশাপাশি যে কোনও ঘটনা নিয়েই আজকাল সংবাদমাধ্যম স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিচারসভা চালাচ্ছে সেই অভিযোগকে সামনে রেখে এবিষয়ে সমাধানসূত্র বার করারও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্মেলেনর শুরুতেই প্রধান বিচারপতি রামানা দেশের বিচারপতিদের শূন্যপদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলেন। সেই সুর টেনেই বাংলাতেও বিচারপতিদের বহু শূন্যপদ রয়েছে এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তালিকা পাঠানো সত্ত্বেও কেন্দ্র সেই কাজ আটকে রেখেছে বলেও আলোচনা পর্বেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী কিরেণ রিজুজুর সামনেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে ৭২ জন বিচারপতির কাজ করার সুযোগ থাকলেও সেখানে মাত্র ৩৯ জন বিচারপতি রয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ছ’মাস আগে ১৩ জন বিচারপতি নামের তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্য মাত্র একজনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।” রিজুজুর সঙ্গে এদিন নানা বিষয়েই মুখ্যমন্ত্রীর মতপার্থক্য হয়েছে বলেই সূত্রের খবর।
এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই রিজুজুও দেশের বিভিন্ন হাই কোর্টে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলেই উল্লেখ করেছিলেন। মাসখানেক আগেই প্রধান বিচারপতি দেশে একটি জাতীয় বিচার বিভাগীয় পরিকাঠামো কর্তৃপক্ষ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার জন্য রাজ্যস্তরের কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রীকে রাখার কথা রয়েছে। মমতা সেই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের রাখার কোনও প্রয়োজন নেই বরং কমিটিতে মুখ্য সচিবদের রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। মুখ্যসচিবদের কমিটিতে জায়গা দেওয়া নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন রিজুজু।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে আলোচনা সভার শুরুতেই রাজারহাটে কলকাতা হাইকোর্টের ক্যাম্পাস করার উপর জেরা দিয়ে তার জন্য ১০ একর জমি দেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রশান্ত শ্রীবাস্তব ১৫ একর জমির দাবি করলেও তা সম্ভবপর নয় বলেও এদিন মমতা জানিয়ে দিয়েছেন। বিচারপতিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীদের কয়েক ঘণ্টা আলোচনার শেষে এদিন একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে এবং উপস্থিত সকলেই তাতে স্বাক্ষর করেছেন।
Be the first to comment