মণিপুরে লাগামছাড়া হিংসা রুখতে ইম্ফল সহ তিন জেলায় কার্ফু, বন্ধ ইন্টারনেটও

Spread the love

 

অমৃতা ঘোষ:-

মণিপুরের লাগামছাড়া হিংসা রুখতে পুরোপুরি ব্যর্থ রাজ্য সরকার। গত কয়েক দিনে মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায় পরস্পরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে আজ বুধবার থেকে আগামী পাঁচ দিনের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হল সেখানে। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে পরিষেবা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। নোটিসে বলা হয়েছে, কোনও প্রকার ভুয়ো খবর, উস্কানিমূলক খবর, প্রাণঘাতী হতে পারে এমন খবর, ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট করতে পারে ও সাম্প্রদায়িক হিংসা ডেকে আনতে পারে বা স্বাভাবিক জনজীবনকে নষ্ট করতে পারে। সে জন্যই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে। এছাড়াও পূর্ব ইম্ফল, পশ্চিম ইম্ফল ও থৌবলে জারি করা হয়েছে কার্ফু। এর আগে ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিমের জেলাশাসক ভোর ৫টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত কার্ফু শিথিল করার কথা জানিয়েছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে পূর্ববর্তী নির্দেশিকা বাতিল করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, তিন জেলাতেই মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সম্পূর্ণ কার্ফু ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জরুরি পরিষেবাকে কার্ফুর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এ দিন ছাত্রদের রাজভবন অভিযান ঘিরে পুলিশের সঙ্গে পড়ুয়াদের সংঘাতের ছবি দেখা যায়। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪০ জন পড়ুয়া। রাত ১০টা অবধি কোনও জীবনহানির খবর মেলেনি। সোমবারই এক অবসরপ্রাপ্ত জওয়ানের দেহ উদ্ধার হয়েছে। দু’দিন আগেই তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ইম্ফল পশ্চিম ও কাঙ্গপোকপি জেলার সীমানাবর্তী অঞ্চল থেকে ওই অবসরপ্রাপ্ত জওয়ানের দেহ পাওয়া গিয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরেই মণিপুরে একের পর এক ড্রোন হামলায় বোমা বিস্ফোরণের খবর আসতে থাকে। যা ঘিরে ফের আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় জাতিদাঙ্গা বিধ্বস্ত ওই রাজ্যে। চলেছে ‘ক্ষেপণাস্ত্র’ হামলাও। এমনই দাবি প্রশাসনের একাংশের। রাজ্যের এমন পরিস্থিতিতে ডিজিপি ও রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়ে ছাত্ররা এদিন রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগ দেন মহিলারাও। এছাড়াও এই ড্রোন ও মিসাইল হামলার নেপথ্যে, কারা রয়েছে, তাদের শাস্তির দাবিতে সরব হন ছাত্ররা। এরপর ইম্ফলের বিটি রোডে তাঁদের আটকায় পুলিশ। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘাত হয়। বেশ কিছু রিপোর্টে দাবি, প্রতিবাদীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছুড়তে থাকে। বিক্ষোভ মুহূর্তে হিংসার চেহারা নেয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। শূন্যে গুলিও চালায়।
অন্যদিকে, মণিপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা প্রতিবাদে আলাদা করে অংশ নেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কুশপুতুল দাহ করেন। তাঁরাও মিছিল করে স্টেট হেডকোয়ার্টাসের দিকে যান। তাঁদের পশ্চিম ইম্ফলের কাকওয়ার কাছে রুখে দেয় পুলিশ। শিক্ষা দপ্তর ঘোষণা করেছে যে মণিপুরের সমস্ত সরকারি, সাহায্যপ্রাপ্ত এবং বেসরকারি স্কুল ও কলেজ আজ ও কাল বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, সোমবারই মণিপুরের কিছু ছাত্র থৌবলের ডিসি অফিসে দেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে একটি সাত রঙের আয়তকার পতাকা টাঙিয়ে দেন। মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর সাতটি বংশের প্রতিনিধিত্বের কথা তুলে ধরতে মণিপুরে অনেকেই এই পতাকা ব্যবহার করেন। থৌবলের ডিসি এ সুভাষ সিং বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি নতুন পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছেন। তবে সেটি ডিসি অফিসের প্রধান ভবনে নয়, মূল ফটকে। এর বাইরে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু এমন পতাকা ‘বদল’ দেখে অনেক জায়গাতেই রটে যায় মণিপুরের একাংশ তাদের ‘স্বাধীনতা’ ঘোষণা করেছে। তবে সে কথা প্রশাসন মানতে চায়নি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*