আগষ্ট থেকেই শহরে বাতিল হচ্ছে ১৫ বছরের বেশি পুরোনো বাস

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি :- আজ পয়লা আগষ্ট। আর বিদায় ঘন্টা বেজে গেল ১৫ বছরের বেশি সময়ের বাসের। কলকাতা মেট্রোপলিটনে আর নামবে না ১৫ বছরের বেশি পুরোনো বাস বা অন্য কোনো যানবাহন। কলকাতা হাই কোর্টের এক রায়ের পরই এই সিদ্ধান্ত। আজ থেকেই কলকাতা সহ হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগনার বহু রুটের বাস বসে গিয়েছে। কিছু কিছু রুট কার্যত চিরতরে বন্ধ হয়েও যাচ্ছে। আর তার জেরেই আজ থেকে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ার আশংকা যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি বসে যাওয়া বাসের কর্মীরাও কাজ হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, যে সব বাসের বয়স ১৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে সেগুলি ১ অগস্ট থেকে বসিয়ে দিতে হবে। রাজ্যের পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে বৃহত্তর কলকাতায় প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো বেসরকারি বাস চলে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার জেরে তার একটা বড় অংশই বসে যাচ্ছে এদিন থেকে। এর জেরে সবথেকে বেশি প্রভাব পড়তে চলেছে কলকাতা ও শহরতলি এলাকায়। দিনের ব্যস্ত সময়ে বাস কমে গেলে বড়সড় ভোগান্তির মুখে পড়বেন নিত্যযাত্রীরাও। পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের দাবি, আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়ে যে সব বাসের বয়স ১৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে তাদের আর রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। নিয়ম ভাঙলে গাড়ি সিজও করা হবে। তবে পরিবহন দফতর সূত্রে খবর, এখনই এনিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে ধাপে ধাপে ১৫ বছরের বেশি বয়সের বাসকে স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে। আবার গত ৫ বছরে প্রায় ১৪০০ বাস রাস্তায় নেমেছে। রাস্তায় এখন যথেষ্ট সংখ্যক বাস রয়েছে। কিছু সংখ্যক বাস বসে গেলেও তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই জানায় রাজ্য পরিবহন দফতর।
নবান্ন সূত্রে খবর, সম্প্রতি বিভিন্ন বাস মালিক সংগঠনগুলি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে এক চিঠি লেখেন, সেখানে আবেদন করা হয় আদালত থেকে বাসের যে বয়সসীমা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে তা আরও ২ বছর বাড়ানোর জন্য। কিন্তু এ ব্যাপারে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ না থাকায় রাজ্য সরকার সেই আবেদনে কোনও কর্ণপাত করেনি। ফলে ১৫ বছরের পুরাতন অনেক বাসই এদিন থেকে বসে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তর ২০০৯ সালে করা একটি মামলার ভিত্তিতে কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় যে, ১৫ বছরের বয়সসীমা পেরিয়ে গেলে আর কোনও বাস কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র এলাকায় চালানো যাবে না। শহর কলকাতার পরিবেশ রক্ষার জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ অনুযায়ী পয়লা আগষ্ট থেকে তা কার্যকর করলো রাজ্য পরিবহন দফতর।
জানা গিয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৫০২টি বাস রেজিস্টার্ড হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বসেও গিয়েছে। উলটোদিকে গত ৫ বছরে কলকাতা এবং শহরতলিতে নতুন প্রায় হাজার দেড়েক বেসরকারি বাস নেমেছে বলেই খবর। তারমধ্যে আলিপুর আরটিওতে ৪৫২টি, বারাসত ৪৪২, বারাসত ২১, বারুইপুর ২টি, বেহালা ৫, হাওড়া, ১০২, হুগলিতে ৪২, কসবা ১৭৪টি, বেলতলায় ৫৪, শ্রীরামপুর ২৪, উলুবেড়িয়া ১৪, কল‌্যাণীতে ১৬, সল্টলেকে ২৭টি। অর্থাৎ শেষ ৫ বছরে ১৩৬৫টি বাস নেমেছে কেএমডিএ এলাকায়।
ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ‌্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বোস বলেন, ‘‘আমরা চাই কোভিডের সময়ে যে দুবছর গাড়ি চলেনি, সরকার সেই দুবছর বাড়তি সময় দিক এই পনেরো বছরের গাড়ির বিষয়ে। এ বিষয়ে আমরা মুখ‌্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’’ বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়মিতভাবে গাড়ি অফরুট হচ্ছে। শুধু এক বছরের হিসাব ধরলে হবে না। সংখ‌্যাধিক্যের বিচারে প্রতি মাসে যত গাড়ি বাতিল হচ্ছে এই কয়েকমাসের মধ্যে তার তুলনায় কিছুটা বেশি হবে। তবে তা কখনওই দু-আড়াই হাজার নয়।’’
বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘গত ৬ বছর ধরে বাসের ভাড়া বাড়েনি। অথচ, ডিজেলের দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে নতুন বাস কেনার সাহস পাচ্ছে না মালিকরা। লকডাউনের সময়ে ২ বছর বাস বন্ধ ছিল। তাই আমরা আরও ২ বছর মেয়াদ বাড়াতে বলেছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি।’
অন্যদিনে, বেসরকারি ক্যাব পরিবহণ সংস্থাগুলিও কলকাতার বিভিন্ন রুটে বাস পরিষেবা চালু করতে আগ্রহী। ইতিমধ্যেই সল্টলেক, নিউটাউন রুটে তারা পরীক্ষামূলক ভাবে বাস চালাচ্ছে। সেটাকে আরও সম্প্রসারিত করতে চাইছে তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেই বিকল্প পথও খোলা রাখছে সরকার। কিন্তু ক্যাবে আর ক্যাব সংস্থা পঋচালিত বাসে কতজন যাত্রা করার মতো সামর্থ্য রাখেন, সেই হিসাবে মাথা ঘামাচ্ছেন না রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ও তাঁর দফতর। ফলে আমজনতার ভোগান্তির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*