চিরন্তন ব্যানার্জি:-
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে আরজি কর কান্ডের একাধিক জনস্বার্থ মামলার শুনানি শুরু হয় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। এদিন শুনানির শুরু থেকেই মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল কামদুনিতে ধর্ষণ এবং খুনের মামলা যে ভাবে সাজানো হয়েছিল, সেই একই কায়দায় আরজি করের মামলা সাজানো হচ্ছে। এবং তথ্য প্রমাণও নষ্ট করে দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এরপরই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, আজ দুপুর ১টার মধ্যেই ঘটনার কেস ডায়েরি জমা দিতে হবে রাজ্যকে। তখন রাজ্যের আইনজীবী আদালতকে জানায় আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। কিন্তু, আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপরই আদালতের নির্দেশ মতোই রিপোর্ট জমা করে রাজ্য। শুধু কেস ডায়েরি নয়, আরজি করের সদ্যপ্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগপত্র, নতুন নিয়োগপত্রও জমা করা হয় হাই কোর্টে। পুলিশ রিপোর্ট দিয়ে ঘটনার তদন্তের ব্যাখ্যা করে আদালতে। কোন কোন সময়ে কী কী করা হয়েছিল, তা আদালতে জানায় রাজ্য।
রাজ্য সরকার আদালতে জানায়, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ টালা থানায় খবর পাঠানো হয় আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। খবর পেয়েই সকাল ১১টা নাগাদ হোমিসাইড বিভাগ হাসপাতালে পৌঁছয়। সাড়ে ১১টার মধ্যেই পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা হাসপাতালে যান। ওই সময়ের মধ্যে ফরেন্সিক টিম হাসাপাতালের সেমিনার রুমে যায়। তার পর বিকেলে শিয়ালদহ কোর্টের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করা হয়।
মঙ্গলবারের শুনানিতেই মৃতার পরিবারের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, প্রথমে পরিবারের কাছে কেউ এক জন ফোন করে বলেন, আপনাদের মেয়ে অসুস্থ। তার পরে আবার ফোন করে বলা হয়, আপনাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সেই প্রসঙ্গে আদালতে রাজ্য সরকার জানায়, পরিবারের দাবি সঠিক। দু’বার ফোন গিয়েছিল মৃতার পরিবারের কাছে। তবে ফোনে কী বলা হয়েছিল, তা আদালতে কিছু বলেনি রাজ্য। কেস ডায়েরিতে সেই বিষয় নিয়ে কিছু রয়েছে কি না, তা-ও এখনই স্পষ্ট নয়।
বিকাশ মঙ্গলবার সওয়াল করার সময় বলেছিলেন, ‘‘মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা-মা তৎক্ষণাৎ আরজি করে যান। কিন্তু তাঁদের তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল।’’ সেই বিষয়েই রাজ্য আদালতে জানায় তারা ঘটনার খবর পাওয়ার পর কী কী করেছিল। শুধু তা-ই নয় প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে যে তদন্ত শুরু করা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সে সম্পর্কে রাজ্যের আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়। প্রথমে এসে কেউ অভিযোগ করেনি। তাই অস্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয়েছিল।’’
রাজ্যের যুক্তি শুনে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘এটা আশা করা যায় না। মৃতদেহ কি রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার হয়েছে? কেন অস্বাভাবিক মৃত্যু বলা হল? হাসপাতালের সুপার ও অধ্যক্ষ রয়েছেন। আপনারা প্রিন্সিপালকে পুরস্কৃত করলেন। কেন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করা হল না? যথেষ্ট হয়েছে। এই যুক্তি দেখাবেন না।’’ রাজ্য জানায়, পুলিশ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করেছে। প্রধান বিচারপতি কেস ডায়েরি দেখে প্রশ্ন করেন, ‘‘এখানে তো ছ’জন চিকিৎসকের বয়ান রয়েছে। আর কেন নেওয়া হয়নি?’’ সেই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য জানায়, এখনও পর্যন্ত মোট ২৭ জনের বয়ান নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমরা আশ্চর্য হচ্ছি, পরিবার এখন অভিযোগ করছে। আগে তারা করেনি। আইন মেনেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ করেছি।’’ প্রধান বিচারপতি শেষে জানান, তাঁরা সব নথি খতিয়ে দেখবেন। মঙ্গলবার বিকেল ৩টের মধ্যে আবার শুনানি হবে।
Be the first to comment