চিরন্তন ব্যানার্জি:-
যতো সময় যাচ্ছে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর কারণ ক্রমশ ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। এদিন ওই মহিলা চিকিৎসকের মায়ের দাবি, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। ‘অর্ধনগ্ন’ অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তারের দেহ পড়েছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি। চিকিৎসকের বাবা জানিয়েছেন, তাঁদের ফোন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, যতটা সম্ভব, তিনি ‘চেষ্টা’ করবেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে এখনো পর্যন্ত এই অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
এদিন ওই মহিলা চিকিৎসকের বাবা জানান, মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে কথা বলেছেন তাদের সাথে। কী বলেছেন তিনি? মৃতার বাবার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছেন। তিনি বলেছেন, যতটা পারেন, চেষ্টা করবেন।’’ যদিও এই আশ্বাসে চিকিৎসকের বাবা এবং মা আপাতত স্বস্তি পাচ্ছেন না। তাঁর মায়ের কথায়, ‘‘আমার মেয়েটাকে কেউ ফেরত দিতে পারবেন না। খুশি কী করে হব? আগে বিচার হোক। মেয়ে চলে গেছে। জীবনে খুশি হতে পারব না।’’ চিকিৎসকের খুড়তুতো ভাই জানিয়েছেন, তিনি পড়াশোনায় বরাবর খুব ভাল ছিলেন। তবে কম মিশতেন। নিজের মতো থাকতেন। পরিবার এই মৃত্যুর বিচার চেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলা চিকিৎসকের। জানা যায় ওই মহিলা চিকিৎসক বৃহস্পতিবার রাতে অনকল ডিউটিতে ছিলেন। চিকিৎসকের মা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে শেষ বার কথা হয়েছিল মেয়ের সঙ্গে। মহিলা বলেন, ‘‘রাত ১১টায় কথা হয়েছে। তখন ওরা খাবার অর্ডার করেছিল। আমায় বলল, তোমরাও খেয়ে নাও। তার পর কোনও কথা হয়নি। ওই শেষ।’’ এর পরেই চিকিৎসকের মা দাবি করেন, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মেয়েটাকে খুন করে ফেলেছে এরা। আমার এই একটা মাত্র মেয়ে। অনেক কষ্ট করে ডাক্তার করেছিলাম। লোকের সেবা করতে এসে নিজে খুন হয়ে গেল।’’ এদিনের ঘটনায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার। এদিনের ঘটনার পর জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতির ডাক দেয়। তাঁরা এদিন হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এদিন মৃত মহিলা চিকিৎসকের মা জানান, ‘‘আমার মেয়েকে খুন করেছে। ওর মতো ভাল মেয়ে হয় না। অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিল দেহ। গায়ে কাপড় ছিল না। চশমাটা ভেঙে গিয়েছিল। মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল। রাতে ও একাই ছিল সেমিনার হলে। ভিতরে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই।’’
এদিন এই ঘটনার পরে রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তদন্ত-সহ তাঁদের বাকি দাবি যত ক্ষণ পর্যন্ত মানা হবে না, তত ক্ষণ বন্ধ থাকবে কাজ। শুধু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। হাসপাতালের ভিতরে বিক্ষোভ দেখায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। তারা ময়নাতদন্তের জন্য চিকিৎসকের দেহ নিয়ে যেতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত তাঁর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্য হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ারাও আরজি করে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন। হাসপাতালের সুপার ‘সত্য প্রকাশ্যে’ আনার দাবি তুলেছেন।
Be the first to comment