চিরন্তন ব্যানার্জি:-
আরজিকর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় দোষীদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার পথে নামলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি এদিন রবিবারের মধ্যে সিবিআইকে তদন্ত শেষ করতে হবে বলেও দাবি জানান। মিছিল মুখরিত হয় ‘দোষীর ফাঁসি চাই’ স্লোগানে।
এদিন মৌলালী থেকে হাঁটা শুরু করে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে মিছিল শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামীকাল সব ব্লকে ব্লকে মিছিল হবে ফাঁসির দাবিতে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ফেক ভিডিও তৈরি করে মানুষকে উত্তেজিত করে দিচ্ছে কেউ কেউ। সব সংবাদ সত্য নয়, সোশ্যাল মাধ্যমে পয়সা কামানোর জন্য, রাজনীতি করার জন্য মিথ্যে ঘটনা বানানো হচ্ছে।’ এআই ব্যবহার করে আজকের দিনে সাইবার ক্রাইম করা হচ্ছে বলে দাবি করেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন অভিযোগ করেন, বুধবার রাতে আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে সিপিএম এবং বিজেপি। তবে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে স্যালুট জানান তিনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘রাত বারোটার সময় ডিওয়াইএফআইফের পতাকা নিয়ে সিপিএম ও বিজেপি জাতীয় পতাকা নিয়ে এটা করেছে, আমি যা ভিডিওতে দেখেছি। জাতীয় পতাকা নিয়ে এসব করা যায় না। এদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস হওয়া উচি। শাস্তি হওয়া উচিত। তাঁর দাবি, বাংলায় একটা ইঁদুর কামড়ালেও সেন্ট্রাল টিম পাঠাতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভদ্রতা করব, আর আপনারা ভাববেন আমরা দুর্বল, এটা হতে পারে না।’
মমতার কথায়, ‘দোষীদের ফাঁসি হোক, আমরা ফাঁসির পক্ষে। রাজ্য সরকার কলকাতা পুলিশকে সবরকম সাহায্য করবে। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের কথা শুনে কলকাতা পুলিশ কাজ করেছে। সবরকম পরীক্ষা করেছে, ডগ স্কোয়াড পাঠিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শুরু করে, যত এভিডেন্স, সব সংগ্রহ করেছে। রাত দুটো পর্যন্ত আমি ওদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম।’ তাঁর দাবি, দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় মৃতার বাবা-মা নামিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বিজেপি-র এক নেত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী কামদুনির ঘটনা টেনে এনে বলেন, ‘কামদুনি কেসে ফাঁসি দিতে চেয়েছিলাম, কোর্ট যাবজ্জীবন দিয়েছিল। এবার ফাঁসি চাই, এবার আর ছাড়ব না।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন দাবি করেন, আরজি করের তদন্ত কলকাতা পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছিল। তিনি বলেন, ‘সেদিন রাতে যা ঘটেছিল, পুলিশের কাছে যা যা ছিল, পুলিশ দিয়ে দিয়েছে। পুলিশ ৯০% এভিডেন্স সংগ্রহ করেছিল, ১৬৪ জনের টিম তৈরি করেছিল। মৃতার বাবা-মা বলেছিল, ভরসা আছে তদন্তে। আমি রবিবার অবধি সময় চেয়েছিলাম। আরও অনেককে ডাকার কথা ছিল, আপনারা সময় দিলেন না। ৩৪ জনকে ডেকেছিল, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পায়নি। আপনাদের তর সইল না। আপনারা মমতা ব্যানার্জীকে অপমান করতে চাইলেন। লজ্জা করে না বিজেপি আর সিপিএম? একটা অমানবিক ঘটনা নিয়ে দানবিকতা করে চলেছেন।’ এদিন তিনি আরও বলন, বুধবার মধ্য রাতে বিজেপি সিপিএম হামলা করে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য। ফ্লোরটা গুলিয়ে ফেলে আসল ভাঙচুর করতে পারেনি। আপনারা সিসিটিভি ভেঙেছেন। সিপিএম, বিজেপি, আপনারা অপেক্ষা করতে পারতেন, সময় দিলেন না। হাসপাতালের এভিডেন্স নিতে সময় লেগেছে। এগুলো বাইরে বলা যায় না। আপনারা রাজনীতি করলেন।’
এদিন, এদিন তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটি রাত ১টায় খেয়েছিল, ২টোয় ঘুমোতে যায়। তার পরে ৯টা অবধি ও কী করল, আপনারা কেউ খোঁজ নিলেন না? এটা জরুরি পরিষেবা। কত প্রেসক্রিপশন লেখাতে হয়, ওষুধ জানতে হয়। সে অতক্ষণ কী করল?’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বার বার বলেন, আরজি কর হাসপাতালে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা আসলে ফেক ভিডিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় সমস্ত গুজবের বিরুদ্ধেও গলা তোলেন তিনি। অভিযোগ করেন, বিজেপি, সিপিএমের টাকায় কিছু সোশ্যাল মিডিয়া চলছে, চ্যানেল চলছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঈর্ষার অভিযোগ তোলেন। বলেন, দেশে তিনি একা মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, যা তাঁর বিরোধিতার বড় কারণ। তিনি বলেন, ‘আমরা চরিত্রহরণ করে খাই না, কুৎসা বেচে খাই না।’
মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ‘আন্দোলনে আমার জন্ম। আন্দোলনেই আমার মৃত্যু হবে। ক্ষমতা থাকলে আমায় টাচ করে দেখবেন।’ এদিন তিনি সাঁইবাড়ির রক্তমাখা ভাত থেকে নন্দীগ্রাম– সিপিএমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সন্ত্রাসের কথা তোলেন মিছিলে।
এদিন তিনি বক্তব্য শেষ করার সময় তিনি বলেন, আমাকে শান্ত থাকতে দিন, যত শান্ত থাকব তত ভাল। নাহলে আমি টর্নেডো, সাইক্লোন হয়ে যাই, জীবন্ত লাশ হয়ে যাই। কোথায় মারবেন আমাকে, পুলিশ থাকবে না, এক যাব, গুলি করে মারুন। দেখব কত ক্ষমতা। কিন্তু আমাকে চমকালে ধমকালে কোনও লাভ নেই।’
Be the first to comment