একুশের মঞ্চে অখিলেশের উপস্থিতিতে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের সুর আরও জোরালো হতে চলেছে..

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি :- সাল ১৯৯৩, তখনো তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়নি। সেই সময় প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে জ্যোতি বসুর সরকার। সেই সময় চতুর্থ বাম সরকারের বিরুদ্ধে ছাপ্পা, রিগিংয়ের অভিযোগ করে কংগ্রেস। এমন আবহেই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সচিত্র ভোটার পরিচয় পত্রের দাবীতে মহাকরন অভিযানের ডাক দেয় যুব কংগ্রেস। দিনটা ছিল ১৯৯৩ সালের ১৪ ই জুলাই। কিন্তু, অভিযানের দুদিন আগে তৎকালীন রাজ্যপাল নুরুল হাসান মারা যাওয়ায়, আন্দোলনের দিন পিছিয়ে করা হয় ২১ শে জুলাই। সেইদিন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে শহরের ৫টি জায়গা থেকে মিছিল করে মহাকরণের দিকে এগোতে থাকে হাজার হাজার যুব কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা।
রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক সচিবালয় থেকে নির্দেশ আসা মাত্রই এই অভিযান রুখতে তৎপর হয় পুলিশ। মহাকরণ পৌঁছানোর আগেই সব মিছিল শহরের বিভিন্ন ক্রসিংয়েই ব্যারিকেড করে আটকে দেয় পুলিশ। মিছিল আটকাতেই ধুমধুমার, বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট বৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের সামলাতে মিছিলে শুরু হয় ব্যাপক লাঠিচার্জ। সেই লাঠির ঘায়ে মাথা ফাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এরপরই বিক্ষোভকারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখনই চলে গুলি। সেই গুলিতে নিহত হন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। ২০১১ সালের ১৩ ই মে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল হয়। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর আলাদা করে কোন বিজয় উৎসব করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়ে দেন জয়ের উদযাপন হবে ২১ শে জুলাই শহীদ তর্পনের মধ্যে দিয়েই। আর সেই উপলক্ষেই প্রতিবছরের মতো এবছরও সাজো সাজো রব তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। কিন্তু এ বছর দিনটি একই সঙ্গে লোকসভা ভোট এবং তার পরে বিধানসভা উপনির্বাচনের সাফল্যের ‘বিজয় দিবস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি দলের একাংশ মনে করছেন এই সভা মঞ্চ থেকে ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের দিশাও দেখাতে পারেন দলের সুপ্রিমো। তবে রবিবার মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিত থাকতে চলেছে উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদাব। সমাজবাদী পার্টির সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলার প্রাক্তন মন্ত্রী কিরণময় নন্দ শনিবার জানান, রবিবার সকালে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি অখিলেশ যাদাব এবং কিরণময় নন্দ পৌঁছে যাবেন ধর্মতলার মঞ্চে। একুশের সভায় বক্তৃতা করবেন অখিলেশ। সভা শেষে আবার দিল্লি ফিরবেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান।
প্রসঙ্গত, বাংলার মতোই যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে বিজেপিকে রুখে দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। সাম্প্রতিক ভোটের নিরিখে বিরোধীদের ফলাফলের নিরিখে সবচেয়ে সফল হয়েছে অখিলেশের দল।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দুই শরিক সপা এবং কংগ্রেসের জোট ৪৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। তার মধ্যে সপা একাই জিতেছে ৩৮টি আসনে। লোকসভা ভোটে অখিলেশের দল উত্তরপ্রদেশের ভাদোহি কেন্দ্রটিকে তৃণমূলের জন্য ছেড়ে দেয়। সেখানে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূলও। বিজেপি সেখানে জিতলেও সপার সমর্থনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী ললিতেশপতি ত্রিপাঠী।
তাই বলাই বাহুল্য, রবিবারের একুশের মঞ্চ থেকে মমতা অখিলেশের জুটির উপস্থিতিতে আরও একবার বিজেপি বিরোধী ঐক্যের সুর আরও জোড়ালো হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*