চিরন্তন ব্যানার্জি:-
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে আরজি কর কান্ডের একাধিক জনস্বার্থ মামলার শুনানি শুরু হয় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে।
এই ঘটনায় রাজ্য এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন মামলাকারীরা। আরজি কর সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে সওয়াল পর্বে বলেন, “কামদুনিতে ধর্ষণ এবং খুনের মামলা যে ভাবে সাজানো হয়েছিল, সেই একই কায়দায় আরজি করের মামলা সাজানো হচ্ছে।” যাবতীয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, বুধবার সকাল ১০টায় তাদের তরফে সবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।
এদিন বিরোধীপক্ষের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি দাবি করেন, কামদুনি কাণ্ডের সময়েও বর্তমানে যিনি কলকাতা পুলিশের কমিশনার, অর্থাৎ বিনীত গোয়েল, তখন তিনি ছিলেন সিআইডির দায়িত্বে। তিনি দায়িত্ব নিয়ে তথ্য-প্রমাণ নষ্টের কাজ করেছিলেন বলে দাবি করেন ফিরোজ। সেই কারণেই দোষীরা ছাড়া পেয়ে গেছে সে সময়ে। ফিরোজের দাবি, ‘এখন বিনীত গোয়েলের তত্ত্বাবধানে এই তদন্ত চললে এই ঘটনারও একই পরিণতি হবে। তাই অবিলম্বে বিনীত গোয়েলকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। এই অপদার্থ অফিসারকে অবিলম্বে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হোক। রাজ্য অবিলম্বে এই মামলার কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনা কোনও এক ব্যক্তির পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। মৃতার দেহে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন মিলেছে তাতে স্পষ্ট কোন এক ব্যক্তির পক্ষে এই অমানবিক কাজ করা সম্ভব নয়। কামদুনির ঘটনার সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে এই ঘটনার। আর বিনীত গোয়েল দায়িত্বে থাকলে এই মামলার পরিণতি হবে একই রকম। আগামী সাত দিনের মধ্যে সমস্ত নথি-তথ্য-প্রমাণ লোপাট করে দিতে পারে। কারণ রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিক এই ঘটনায় তদন্ত করছে। তাই আমার সন্দেহ, সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাট করতে পারে ওরা।’ তাঁর কথায়, ‘আমি চাই, এই ঘটনা যাতে কামদুনির মতো হয়ে না যায়। মামলার কেস ডায়েরি তলব করুক আদালত। আজই দুপুর দুটোর মধ্যে তদন্তের কেস ডায়েরি তলব করা হোক।’
অন্যদিকে, এই ঘটনায় রাজ্যের বিরোধীপক্ষের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী আদালতে সওয়াল করেন, ‘আগামী সাত দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মামলায় নজর দিক আদালত। সাত দিন সময় নষ্ট হলে তথ্যপ্রমাণ নষ্টের আশঙ্কা থেকে যাবে, তাই অবিলম্বে সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, ঘটনার পরে সিবিআই তদন্ত দিলে আপত্তি নেই। তাহলে কেন এখনই সিবিআই তদন্ত দেওয়া হবে না?’
সওয়াল জবাবের পরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। কলকাতা পুলিশের উচ্চ পদস্থ এবং দক্ষ অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। আদালতে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট জমা দেবো। তাতেই বোঝা যাবে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনো রকম আপস করা হচ্ছে না।’ এরপরই রাজ্যের আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, আজ দুপুর ১টার মধ্যেই ঘটনার কেস ডায়েরি জমা দিতে হবে রাজ্যকে।
Be the first to comment