রোজদিন ডেস্ক :- লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা তৈরি করেছিলেন দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ। নির্বাচনের আগে থেকে শুরু করে তারা সারা রাজ্য জুড়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালান। মোদী হটাও দেশ বাঁচাও এটাই ছিল তাদের মূল শ্লোগান। এর পাশাপাশি বাংলাতেও যে তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বিজেপির তুলনায় বেশি হবে সেটাও তারা বলেছিলেন। তাদের শ্লোগান ছিল বাংলা জিতবে, অর্থাৎ বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে। বাস্তবে তাই ই হয়েছে। মোদীকে হটানো যায়নি একথা সত্যি কিন্তু বিজেপি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেনি। এনডিএ ও ৩০০ আসনের কম পেয়েছে। যেখানে বিজেপির শ্লোগান ছিল ইশ বার ৪০০ পার। এই ৩০০ ছুঁতে না পারা কে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ মোদীর হার বলেই মনে করছেন। মঙ্গলবার প্রেস ক্লাব এ দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ২৯ টি আসনে বিপুল জয় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়, পাশাপাশি বিজেপির খারাপ ফল নিয়ে মন্তব্য করা হয়। যদিও দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে তারা প্রধান মন্ত্রী তথা এনডিএ সরকারে কাছে ২০ টি দাবি করেন। এই দাবি প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরে তারা লিখিত ভাবে পাঠাবেন।
সেই দাবি গুলি হল –
১. এন আর সি, সি এ এ, পি এম এল এ – এর মত জনবিরোধী কালাকানুন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. প্রত্যেকটি সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠী কে তাদের নিজস্ব সামাজিক এবং ধর্মীয় আচরণ বিধি পালন করার স্বাধীনতা দিতে হবে।
৩. রাজ্য সরকারের কাজে, রাজ্যের অনুমতি ছাড়া অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এখনো বজায় আছে।
৪. ই ডি, সি বি আই, ইনকাম ট্যাক্সের মত কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলিকে রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
৫. গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে যাঁরা দমনমূলক আইনে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি চাই।
৬. বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতহীন করতে হবে। কোনো বিচারপতির রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলে, তাকে অবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে।
৭. মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের একচ্ছত্র অধিকার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রাখা চলবে না। নিরপেক্ষ ভাবেএই নিয়োগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দিতে হবে।
৮. রাজ্যের বকেয়া অর্থ আটকে রাখা চলবেনা।
৯. পি এম কেয়ার্স ফান্ডের টাকার হিসাব দিতে হবে। রিজার্ভ ব্যাংক থেকে কত অর্থ কেন এবং কি কারণে তোলা হচ্ছে তার হিসাব এবং ব্যাখ্যা চাই।
১০. ভুয়ো নির্বাচনী সমীক্ষা করিয়ে শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা লুট করে কারা চলে গেল তার তদন্ত চাই।
১১. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে কোন সংস্থাকে কত কোটি টাকা ঋণ মকুব করা হয়েছে এবং কেন করা হয়েছে তার তদন্ত চাই।
১২. নির্বাচনী বন্ড কেনার পরিবর্তে কোন সংস্থাকে কোন কোন সরকারী বরাত দেওয়া হয়েছে তার তদন্ত চাই।
১৩. বিশেষ কয়েকটি শিল্প গোষ্ঠীকে যাবতীয় সুযোগ- সুবিধা দেওয়া আপাতত বন্ধ করা হোক।
১৪. নিটপরীক্ষার দূর্নীতি নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত শুরু হোক।
১৫. রাজনৈতিক নেতা এবং দলের ঘৃণা ভাষণ এবং মেরুকরণকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হোক , যারা এই কাজ করবে তাঁদের বিরূদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
১৬. রাজ্যপালকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে রাজনৈতিক দলকে মদত দেওয়া বন্ধ করা হোক। যদি কোনো রাজ্যপাল এরূপ আচরণ করেন, তাহলে অবিলম্বে তাঁকে সেই পদ থেকে অপসারণ করা হোক।
১৭. কোনো রাজ্যপালের বিরূদ্ধে যদি দূর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে , তাহলে তাকে পদ থেকে সরিয়ে অবিলম্বে তদন্ত করতে হবে।
১৮. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, দলিত এবং জনজাতিদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। এই ধরনের অত্যাচারের অভিযোগ পেলে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৯. পরিবেশ ধ্বংস করে বড় শিল্পগোষ্ঠীকে শিল্প স্থাপনের অনুমতি দেওয়া চলবে না।অরণ্যের অধিকার অরণ্য বাসী জনজাতির হাথেই ন্যস্ত রাখতে হবে।
২০. মহিলাদের বিরূদ্ধে কোনো রকম অশালীন আচরন বা মন্তব্য যদি কোনো জনপ্রতিনিধি করেন , তাহলে তাঁর জনপ্রতিনিধি পদ বাতিল করার আইন প্রণয়ন করতে হবে।
দেশ বাঁচাও গণ মঞ্চের পক্ষ থেকে এই কুড়ি দফা দাবি এনডিএ সরকারের জন্য পেশ করা হচ্ছে।
Be the first to comment