রোজদিন ডেস্ক :- শিল্পী মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে হয়তো তাঁর সৃষ্টিতেই। তাইতো বর্তমান সময়ে যেখানে আবালবৃদ্ধ -বনিতা সকলের কাছেই মুষ্টিবদ্ধ ফোনেই সময় অতিক্রম হয়ে যায়, সেখান দাঁড়িয়ে এক অভাবনীয় উদাহরণ সৃষ্টি করলো সীমান্তবর্তী এলাকা মুর্শিদাবাদের লালগোলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের ছাত্র- ছাত্রীরা।
আইডিয়াল আর্ট স্কুল ও সাত্ত্বিক – সৌল অফ আর্ট এর যৌথ উদ্যোগে গত ৫ জুলাই , ২০২৪ থেকে ৭ জুলাই , ২০২৪ পর্যন্ত , প্রান্তিক লালগোলার চুয়াপুকুর নামক অঞ্চলে চলেছিল দ্বিতীয় বর্ষ চিত্রকলা প্রদর্শনী । সাত্ত্বিক – সৌল অফ আর্ট এর কর্ণধার মোঃ মিজানুর খান এই চিত্র প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন করেন । বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক – শিক্ষিকা , সহ শিক্ষক – শিক্ষিকা , অঞ্চলের প্রধান , বহু অভিভাবক অবিভাবিকা , ছাত্রছাত্রী ; সব মিলিয়ে যেন চাঁদের হাট বসেছিল ওই তিনদিন ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে সকালে ছিল বসে আঁকো প্রতিযোগিতা ও বিকেলে ছিল একটু শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান, বহরমপুর থেকে আগত প্রখ্যাত শিল্পী ও লেখক কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত – র আলোচনা “আমরা কেন ছবি আঁকবো?” সকল ছাত্রছাত্রী আলোচনা দারুণ উপভোগ করেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানের শিল্পের প্রশিক্ষক প্রমিত দাস ।
তৃতীয় দিন পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে প্রদর্শনীর সমাপ্তি ঘটে ।
ভুট্টার ও পাটের সবুজ ক্ষেতের মাঝে রঙিন ছবির সমাহার সকলের হৃদয় কেড়েছে । কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বড়দের মিলিয়ে মোট ১৫০ এর অধিক ছবি প্রদর্শিত হয় এই উৎসবে । এ যেন রঙের উৎসব ।
সাত্ত্বিক – সৌল অফ আর্ট এর কর্ণধার মোঃ মিজানুর খান জানিয়েছেন , ” প্রদর্শনীর উদ্বোধক হিসেবে উদ্যোক্তাদের গভীর মমত্ব , আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি । ধীরে ধীরে এভাবেই গ্রামীণ শিল্পকলা ছুঁয়ে যাক শহর থেকে শহরান্তর।পূর্ণরূপে পল্লবিত হোক , পুষ্পিত হোক কচিকাঁচারা, সমৃদ্ধ হোক লালগোলার সকল প্রান্ত এমনকি আনাচ কানাচ। ওদের মালি হিসেবে এইই প্রার্থনা করি।”
বিশেষ অতিথি ও আলোচক কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত বলেছেন , ” শস্য আসলে গ্রামেই ফলে । প্রমিতের খুব ইচ্ছে ছিল আমি ওর ছাত্রছাত্রীদের কাছে উপস্থিত হয়ে কিছু কথা বলি। এইরকম এক প্রান্তিক অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা তো ছবি আঁকা শেখারই সুযোগ পায় না। তার ওপর আবার সেখানে ছবি নিয়ে আলোচনা! সত্যিই অভাবনীয় পরিকল্পনা। তা আমি সবদিক ভেবে প্রমিতকে আগে থেকেই বক্তব্যের বিষয় ঠিক করে দিয়েছিলাম ‘আমরা কেন ছবি আঁকবো?’ সেখানে প্রায় দেড়শো ছবি। আর কি আশ্চর্য, কোনও ছবিই অবজ্ঞা করার মতো নয়। অন্তত ৩০ শতাংশ ছবির মান তো রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেবার মতো। মনে রাখতে হবে এমন একটি অঞ্চলে এই প্রদর্শনী, যেখানে যাবার জন্য সরাসরি কোনো ট্রেন, বাস নেই। যানবাহন বলতে সাইকেল, বাইক এবং টোটো। আমাদের মতো শহুরে মধ্যবিত্তের বর্ণনায় ‘গণ্ডগ্রাম’।প্রমিত আর তার বন্ধুরা এইভাবেই ছবির চাষ করে চলুক। “
আর্ট স্কুলের শিক্ষক প্রমিত দাস বলেছেন , ” অনেক প্রতিকূলতাকে পার করে এই প্রদর্শনী করা । ধন্যবাদ সুমন দা ও রুহুল দা (আইডিয়াল একাডেমী এর দুই উদ্যোক্তা ) এতো বড়ো উদ্যোগে সবসময় পাশে থেকেছে তারা । আমার প্রিয় শিল্পী দাদা ও ভাইয়েরা সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে এই অনুষ্ঠানে । আর যারা আমাকে সব থেকে বেশি সাহায্য করেছে তারা হলো আমার ছোট ছোট চারাগাছগুলো , আমার ছাত্রছাত্রীরা । প্রদর্শনীর ছবি করা থেকে শুরু করে ছবি করানো , ছবি গুছানো , বাঁধিয়ে নিয়ে আসা , craft এর জিনিস বানানো ও সেগুলো display করা , ছবি লাগানো , দুই দিন আগে থেকে গোটা জায়গাটা আলপনা দিয়ে সাজানো , সকলের মাঝে প্রচার চালানো , বার বার বিভিন্ন কাজে ছুটে যাওয়া ইত্যাদি সব কিছুতে আমার পাশে থেকেছে ওরা । ওদের আনুগত্য , সততা ও ভালোবাসার ফল স্বরূপ এই প্রদর্শনী । সকলকে অনেক অনেক ভালোবাসা । ওদের প্রতিভার আলো ছড়িয়ে পড়ুক চারিদিকে । “
সৎ ভাবনা, সৎ উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলুক এই শৈল্পিক বীজ বপন। চারা গাছ থেকে হয়ে উঠুক মহীরূহ। অনেক শুভ কামনা রইলো আগামীর জন্য।
Published by Rojdin.in // Story Promit Das
Be the first to comment