গ্যালারিতে বসেই কেঁদে ফেললেন মারাদোনা

Spread the love

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের আগে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে কলম্বিয়ার কাছে ৫ গোলে হেরে গেছিল আর্জেন্টিনা। ঠিক এবারের মতোই মূলপর্বে কোয়ালিফাই না করতে পারার অবস্থা হয়েছিল। গ্যালারিতে বসে কেঁদে ফেলেছিলেন মারাদোনা। নিজেকে সামলাতে পারেননি। অবসর ভেঙে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ৯৪ কেজি ওজনের শরীরটাকে দুমড়ে মুচড়ে ৫৬ কেজিতে নিয়ে এসেছিলেন। বিশ্বকাপের শুরুটা দারুণ করেছিল আর্জেন্টিনা। গ্রিসকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল। তার মধ্যে একটি গোল ছিল মারাদোনার। পরের ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ২-০ গোলে। দুটোর পিছনেই ছিল মারাদোনার অবদান। সেই ম্যাচের পরেই নিষিদ্ধ ড্রাগসেবনের অভিযোগে বিশ্বকাপে সাসপেন্ড করা হয় মারাদোনাকে। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, “আমার মেয়েদের নামে শপথ করে বলছি, আমি ড্রাগ নিইনি।”

দেশকে আবার বিশ্বকাপ দিতে না পারার দুঃখ কুড়েকুড়ে খেয়েছিল তাঁকে। তারপর দিন এগিয়েছে। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে মেসি যখন খেলতে নেমেছিল, গ্যালারি থেকে মারাদোনা ‘মেসি মেসি’ চিৎকার করেছিলেন, বাচ্চা ছেলের মতো। গোটা বিশ্ব অবাক হয়ে বলেছিল, এটা মারাদোনাই পারেন, নিজে লিজেন্ড হয়েও একটা বাচ্চা ছেলেকে উৎসাহ দিতে এভাবে চিৎকার করতে। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে মারাদোনা আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন। কোচ হিসেবে তিনি ভালো নন, তবু চেষ্টা করেছিলেন যদি দেশকে জেতানো যায়! সেবারেও মেসিকে জড়িয়ে ধরা, সাংবাদিকদের বলে দেওয়া “ও আমার চেয়ে অনেক বড় প্লেয়ার!”। সত্যি, এসব মারাদোনাই পারেন। আর কিছু চাননি জীবনে নিজের দেশকে বিশ্বকাপজয়ী দেখতে চাওয়া ছাড়া। বর্তমানে মেসির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় মারাদোনার।

তবু আজ গ্যালারিতে টেনশনে বসে থাকতে গেল লোকটাকে। আর্জেন্টিনা গোল মিস করেছে, আর প্রবল আফসোসে কেঁপে উঠেছেন বারবার। ঠিক ছেলেমানুষের মতো। যেন সম্ভব হলে নিজেই মাঠে নেমে পড়বেন। এই যে প্যাশন, পাগলের মতো প্যাশন, ‘মরে যাবো তবু হাল ছাড়ব না’ মনোভাব, এই আবেগ মেসির মধ্যে নেই। এখানেই মারাদোনা অনন্য। আমি এই অদম্য মানুষটার কারণেই আর্জেন্টিনার ভক্ত। আমার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ এই কারণেই আর্জেন্টিনার সমর্থক। একজন আদ্যন্ত বিশৃঙ্খল মানুষ, বল পায়ে পেলে ঈশ্বর হয়ে যেতেন। বল যেন বাধ্য ছাত্রের মতো কথা শুনতো লোকটার। মারাদোনা, আপনাকে ভালোবেসেছি আমরা। তাই আপনার প্রাণের চেয়েও প্রিয় দেশকে সমর্থন না করে কোনও উপায় নেই আর। হারা, জেতা, ড্র এসব গায়ে লাগেনা আর। হয়তো মেসি এবার বিশ্বকাপ জিতবে না, হয়তো জিতবে, কী এসে যায়! আমার হৃদয়ের সিংহাসনে আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। চিরকাল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*