চিরন্তন ব্যানার্জি :- আগামী বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের প্রত্যেক প্রান্তে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু শুধু পরিশ্রুত পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিলেই হবে না, এই মুহূর্তে সরকারের প্রধান চিন্তার কারণ জল অপচয় রোখা। যেভাবে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমছে, তাতে যথেষ্টই চিন্তা বাড়ছে রাজ্য সরকারের। আর সে কারণেই এবার জলের অপচয় রুখতে আইন আনতে চাইছে রাজ্য সরকার।
বুধবার বিধানসভার বাদল অধিবেশনের অষ্টম দিনে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য এবং কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায়। তবে এই নতুন আইনে শাস্তির বিধান থাকছে কি না, সে বিষয়ে তিনি মুখ খোলেননি। এদিন প্রশ্নোত্তর পর্বে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ছিল। সেখানেই মন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের কিছু কিছু ব্লককে ভূগর্ভস্থ জলের আর্সেনিক দূষণ ও ফ্লোরাইড দূষণ কবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যের ৮টি জেলার ৮৩টি ব্লক আর্সেনিক দূষণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ৭ জেলার ৪৩ টি ব্লককে ফ্লোরাইডের জন্য চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার। এই কারণেই ভূগর্ভস্থ জল তোলার ব্যাপারে নলকূপ নির্মাণ বন্ধ।
বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ কারকের এক অতিরিক্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, জাপানী ব্যাঙ্কের সাহায্যে খরা প্রবণ পুরুলিয়া জেলার পাঁচটি ব্লকে পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় জল প্রকল্পের কাজ চলছে। পানীয় জল সরবরাহের পাশাপাশি প্রতি মুহূর্তেই জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এই জন্য মোট ২১৭ টি ল্যাবরেটরি রয়েছে, তার মধ্যে ২১৬টি এনএবিএল স্বীকৃত।’
এদিন তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ৯০ লক্ষ পরিবারকে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সময়ে জমি পেলে এই পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে প্রকল্প চলছে তা সময়েই শেষ হবে। পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সামগ্রিকভাবে এই মুহূর্তে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে শুধুমাত্র চলতি অর্থবছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থান উঠে এসেছে। এর পাশাপশি তিনি বলেন, এই মুহূর্তে রাজ্যের বেশকিছু অঞ্চলে জলে আয়রন বেশি রয়েছে। তিনি বলেন, এই নিয়ে গবেষণা এবং অনুসন্ধান চলছে।
এদিন জলস্বপ্ন প্রকল্প নিয়ে বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শেয়ার নিয়েও কটাক্ষ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই প্রকল্পে কেন্দ্র এবং রাজ্যের শেয়ার ফিফটি ফিফটি। কিন্তু রাজ্যকে জমি কিনতে হয়, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ করতে হয় । ফলে আখেরে রাজ্য সরকারের শেয়ার ৭৫%-এ পৌঁছে যায়। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার জলস্বপ্ন প্রকল্পে ১২ হাজার ১৭ কোটি টাকা দিয়েছে। এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার খরচ করেছে ১১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা।
এদিন বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়ি অভিযোগ করেন, বিজেপি করলে বাড়িতে জল দেওয়া হচ্ছে না। যদিও সেই অভিযোগ খারিজ করে মন্ত্রী পুলকের দাবি, বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছানোর কাজ তৃণমূল কর্মীরা করেন না, ইঞ্জিনিয়াররা করেন। মন্ত্রী আরও বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে বাড়িগুলোর নাম জানালে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া হবে।
জলের অপচয় নিয়েও এদিন বিধানসভায় মুখ খুলেছেন মন্ত্রী। মোটর দিয়ে বহু মানুষ জল তুলছে। কেউ নার্সারি, কেউ হ্যাচারি, কেউ সেগুলি রেস্তোরাঁয় ব্যবহার করছে। অপচয় বন্ধে এই সদনে বিল নিয়ে আসা হবে বলে এদিন বিধানসভায় জানিয়েছেন মন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি আবেদন করেন, “মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব আমাদের সকলকেই নিতে হবে।”
এদিন স্পিকার বলেন, বিদ্যালয়গুলিতে পরিশ্রুত পানীয় জল নিশ্চিত করতে মন্ত্রীকে এই ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
Be the first to comment