তফসিলি জাতি-উপজাতির সংরক্ষণ নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি :- তফসিলি জাতি-উপজাতির সংরক্ষণ নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দেশের শীর্ষ আদালতের। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চাকরিতে তফসিলি জাতি-জনজাতিদের (এসসি-এসটি) মধ্যে একাংশকে চিহ্নিত করে আলাদা করে সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে জানাল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারের। এবার তফসিলি জাতি এবং উপজাতিভুক্ত নাগরিকদের মধ্যেও হবে শ্রেণিবিন্যাস। সেই বিন্যাসের ভিত্তিতে নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে শীর্ষ আদালত, তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের মধ্যেও সংরক্ষণের জন্য আলাদা করে  শ্রেণিবিন্যাসে সায় দিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘উপশ্রেণি চিহ্নিতকরণের বিষয়টি ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সমতার নীতি লঙ্ঘন করছে না।’’ তবে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায়ের ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছয়নি। ছ’জন বিচারপতি তফসিলি জাতি-জনজাতিদের মধ্যে ‘অতি পিছিয়ে পড়া অংশকে’ চিহ্নিত করে ‘কোটার মধ্যে কোটা’র সুবিধা দেওয়ায় ছাড়পত্র দিলেও বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ তফসিলি জাতিভুক্তদের মধ্যেও অনেক শ্রেণি রয়েছে, তাঁদের মধ্যেও কিছু কিছু শ্রেণি তুলনায় পিছিয়ে পড়া। সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও এই প্রজাতিভুক্তদের উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ছিলেন, প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি বিআর গভই, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী, বিচারপতি পঙ্কজ মিথাল, বিচারপতি মনোজ মিশ্র এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা। সাত বিচারপতির মধ্যে ৬ বিচারপতিই একমত, যে দেশের সব তফসিলি জাতি বা উপজাতিভুক্ত নাগরিক সমশ্রেণিভুক্ত নন। তাই তাঁদের মধ্যে আলাদা বিন্যাস করা যেতেই পারে। শুধুমাত্র বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী দ্বিমত পোষণ করেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৫ সালে শীর্ষ আদালত এক রায়ে বলেছিল, ‘তফসিলি জাতি-জনজাতির মধ্যে শ্রেণি বিভাজনের এক্তিয়ার কোনও রাজ্যের সরকারের নেই’। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ সেই রায় খারিজ করে দিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও এসসি-এসটিদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে পড়া অংশকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে বিশেষ সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।
বলাই বাহুল্য, এই রায়ের ফলে দেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থা পুরোপুরি বদলে যেতে পারে। কারণ, এর পর কোনও রাজ্য চাইলে তফসিলি জাতি বা উপজাতিভুক্তদের শ্রেনিবিন্যাস করে আলাদা আলাদা শ্রেণির জন্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ চালু করতে পারে। তফসিলিদের মধ্যে যারা বেশি অনগ্রসর তাঁদের জন্য দেওয়া হতে পারে বাড়তি সংরক্ষণ। তবে, সেক্ষেত্রে সার্বিক যে সংরক্ষণের মাত্রা সেটা পরিবর্তন করা যাবে না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*