ত্রিপুরার রাজধানীতে পুরভোট ঘিরে অশান্তির খবর মিলতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর অতিরিক্ত দুই কম্পানি পাঠানোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে বলা হয়েছে শীর্ষ আদালতের তরফে। ভোট গণনা শেষ না হওয়া অবধি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলেই জানানো হয়েছে।
এদিন সকাল সাতটা থেকে আগরতলায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়, বেলা চারটে অবধি ভোট গ্রহণ চলবে। তবে সকাল থেকেই অশান্তির খবর মিলেছে রাজ্যজুড়ে। তৃণমূলের তরফে প্রার্থী ও কর্মীদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। সিপিআইএমের তরফেও দাবি করা হয়েছে যে, বিজেপি রিগিং করছে। ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের শাসানো হচ্ছে।
ত্রিপুরায় বারংবার নির্বাচনী প্রচারে বাধা পাওয়ায় গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে শীর্ষ আদালতের তরফে সেই আর্জি খারিজ করে বলা হয়েছিল, “গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় নির্বাচন স্থগিত রাখাটা একটি চরম পদক্ষেপ। যদি অন্য আর কোনও উপায় না থাকে, একমাত্র তাহলেই একেবারে শেষ উপায় হওয়া উচিত এটি।”
শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ পর্ব থেকে শুরু করে ফল ঘোষণা, গোটা প্রক্রিয়া যাতে নির্বিঘ্নে সম্পূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয় ত্রিপুরা পুলিশকে। কোনওরকম পক্ষপাতিত্ব না করে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ত্রিপুরা পুলিশকে। তৃণমূলের তরফে তাদের কর্মী ও দলীয় প্রার্থীরা প্রচারে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার যে অভিযোগ তো হচ্ছে, সেগুলিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও রাজ্যে হিংসা না থামায়, আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব। এদিন শুনানি শুরু হওয়ার পরই শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, “এই ধরনের পরিস্থিতিতে নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে, তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে যত দ্রুত সম্ভব অতিরিক্ত দুই কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ২৮ নভেম্বর ভোট গণনা অবধি এই বাহিনী মোতায়েন থাকবে।”
স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণের জন্য প্রতিটি বুথে যাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকে, তা নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এদিন শুনানির শুরুতেই আইনজীবী গোপাল শঙ্কর নারায়ণ বলেন, “ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে এবং বিগত আড়াই ঘণ্টা ধরেই একাধিক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে যে বহিরাগতরা ভোট কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। ওখানে যা হচ্ছে, তা সন্ত্রাসবাদ ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের কাছে প্রমাণ হিসাবে ভিডিয়োও রয়েছে।”
উল্টোদিকে, ত্রিপুরা সরকারের পক্ষে হাজির আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি বলেন, “রাজ্যে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছে। মামলাকারীরাই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণে বাধা দিচ্ছে।”
শীর্ষ আদালতের তরফে দুই পক্ষকেই থামিয়ে বলা হয়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা ঘটনা নিয়ে কাটাছেঁড়া না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে অতিরিক্ত দুই কম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।”
Be the first to comment