রোজদিন ডেস্ক :- শনিবার সকালে একজন বি জে পি নেতার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে ওই বি জে পি নেতাকে বলতে শোনা গেছে যে সন্দেশখালির পুরো ঘটনাই সাজানো। মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনা মিথ্যে, তাঁদের দিয়ে মিথ্যে বলানো হয়েছে। গোটা ঘটনাটাই বি জে পি নেতা শুভেন্দু অধিকারী টাকা দিয়ে করিয়েছে।
সন্দেশখালির এই স্টিং নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায় “সন্দেশখালির এই স্টিং মারাত্মক! এতে বোঝা যাচ্ছে বি জে পি কতটা নোংরা । বাংলার সংস্কৃতিমনোজ্ঞ ও প্রগতিশীল ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ও রাজ্যকে বদনাম করতে , এই বাংলা বিরোধীরা সবরকম ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেছেন, “অতীতে কখনও দেখা যায়নি যে দিল্লীর শাসক দল কোনও রাজ্যকে ও সেই রাজ্যের মানুষকে বদনাম করতে এরকম করেছে
তবে ওই ভিডিও যে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে নতুন করে আলোড়ন তৈরী করেছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সন্দেশখালিতে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনাকে সামনে রেখে এবার বাংলায় ঘুঁটি সাজিয়েছিল বি জে পি। সোন্দেশখালির যে মহিলা নির্যাতিতা বলে দাবি করেছিলেন সেই রেখা পাত্র কে বসিরহাটের প্রার্থী করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে যে স্টিং ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে তা বিজেপি র প্রচার কৌশলে ভিতে ধাক্কা দিয়েছে। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শুভেন্দু অধিকারী বা বিজেপি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। দেখা যাক এই অভিযোগ তাঁরা কিভাবে মোকাবিলা করেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, গঙ্গাধর একটি চেয়ারে আরাম করে বসে রয়েছেন। আর কেউ বা কারা তাঁর সঙ্গে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে। গঙ্গাধরকে তাঁরা প্রশ্ন করেন, এই আন্দোলন এতদিন টিকে রইল কীভাবে? তার জবাবে গঙ্গাধর বলছেন, “তিনটে ছেলে এ দিক ও দিক যাচ্ছে, গোটা বিষয়টি পরিচালনা করছে। শুভেন্দুর আমাদের উপরে আস্থা আছে। শুভেন্দু এক বার ঘুরে গিয়েছে, তাতেই আন্দোলন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে। “
“দাদা, তোমরা কী লেভেলের কাজ করেছ, বুঝতে পারছ? ধর্ষণ হয় নাই, তাকে ধর্ষণ বলে চালিয়েছ। তোমার বাড়ির বউকে দিয়ে এই কাজ করাতে পারতে? আমরা তো পারব না”। তিনি এও প্রশ্ন করেন, কীভাবে ওদের ব্রেনওয়াশ করালেন? জবাবে গঙ্গাধর বলেন,“শুভেন্দুদার নির্দেশে আমরা এই কাজ করেছি। উনি আমাদের সাহায্য করেছেন। শুভেন্দুদা বলেছেন, এটানা করলে, তাবড় তাবড় লোকদের গ্রেফতার করানো যাবে না। আমরাও ওখানে দাঁড়াতে পারব না।”
ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করাতে মহিলাদের কীভাবে রাজি করানো হয়েছিল তাও বলতে শোনা যায় গঙ্গাধরকে। তিনি বলেন, “রেখাই প্রথম জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে বাকি মহিলারা করেছে। যেটা বলেছি ওরা সেটা শুনেছে। ওদের বোঝানো হয়েছে, গ্রেফতার না হলে ওদের টিকতে দেওয়া হবে না। আন্দোলনও সফল হবে না।”
এমনকি ভিডিওতে গঙ্গাধরকে এও বলতে শোনা যায় যে, ধর্ষণের অভিযোগগুলি সাত-আট মাসের পুরনো ঘটনা বলে সাজানো হয়েছে। যাতে মেডিকেল পরীক্ষায় ব্যাপারটা ধরা না পড়ে। অনেক ভেবেচিন্তে করতে হয়েছে।
গোটা ভিডিওতে বেশ কয়েকবার শুভঙ্কর গিরি নামে এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ আসে। ভিডিওতেও শোনা যায়, এই শুভঙ্কর ন্যাজাটের নেতা। পরে টাকা পয়সার হিসাব নিয়ে সমস্যা হওয়ায় তিনি সরে যান। গঙ্গাধর এও বলেন, শুভেন্দুর পিএ পীযূষও সন্দেশখালিতে গিয়েছেন।
ব্যাপারটা এখানেই থেমে নেই। সন্দেশখালির ঘটনার পর তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনের চেয়ারম্যান সেখানে গিয়েছিলেন। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, গঙ্গাধর বলছেন, কমিশনের সামনে যে জবানবন্দি দেওয়া হয়েছিল, তাও সাজানো ছিল। সেজন্যও মহিলাদের আগে থেকে বোঝানো হয়েছিল।
ভোটের মুখে স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফাঁসের ঘটনা বাংলায় নতুন নয়। এবারও ব্যতিক্রম হল না। তবে স্টিং অপারেশনে যা দেখানো হয়েছে, তা যে গুরুতর তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সন্দেশখালিতে মহিলাদের ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে বিজেপি বাংলা তথা গোটা দেশে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। সেই ঘটনার মৌলিক সত্যতা নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠে গেল। এখন দেখার বিজেপি বা শুভেন্দু অধিকারী এই স্টিং অপারেশনের বিষয় নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেন।
Be the first to comment