পরিযায়ীদের পৃথক মন্ত্রকের প্রতিশ্রুতি বামেদের খসড়া ইস্তাহারে

Spread the love

জনগণের পরামর্শ মেনে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের কথা বলেছিল বিজেপি ৷ এ বার বামফ্রন্টও সেই পথে হাঁটল ৷ তারা প্রকাশ করল খসড়া ইস্তাহার ৷ তার উপর মতামত সংগ্রহের জন্য ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারটি ৷ শরিক কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট তো বটেই, সাধারণ মানুষকেও পরামর্শ পাঠানোর আবেদন জানিয়েছে বামেরা ৷ প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংযোজন করে চূড়ান্ত ইস্তাহার প্রকাশ করা হবে বলে তারা জানিয়েছে ৷ বামেদের খসড়া ইস্তাহারে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ৷

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু খসড়া ইস্তাহার প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে জানান, “এই খসড়া ইস্তাহার সংযুক্ত মোর্চার শরিক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কাছেও পাঠানো হয়েছে । তাঁদের মতামতও এই ইস্তাহারে প্রতিফলিত হবে । পশ্চিমবঙ্গের সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের প্রতি আমাদের আবেদন – আপনারাও আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মত পাঠান আগামী ২০ মার্চের মধ্যে । আমরা মানুষের মত নিয়েই আগামী সরকারের কর্মসূচি ঘোষণা করতে চাই ।”

বামেদের ইস্তাহারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থান ও শিল্পের উপর ৷ তবে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে ইস্তাহারে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানের জন্য জোর দেওয়া হবে ছোট ও মাঝারি শিল্পে ৷ জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজনকে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করা হবে ৷

বামেদের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পৃথক মন্ত্রক তৈরি করা হবে বলে দাবি করেছে বামেরা ৷ ইস্তাহারে বলা হয়েছে, সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিককে নথিভুক্ত করে অন্য রাজ্যে কর্মরত অবস্থায় তাদের পাশে থাকবে রাজ্য সরকার ৷ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসিক একুশ হাজার টাকা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে । বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মাসে ২৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে ও তাদের সস্তায় রেশন সরবরাহ করা হবে । বন্ধ চটকল, চা বাগান ও অন্যান্য বন্ধ শিল্প খোলা-সহ শ্রমিকদের সমস্যাগুলি সমাধানে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্যখাতেও একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামেরা ৷ ইস্তাহারে বলা হয়েছে, “জনস্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের । বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে । স্বাস্থ্যসাথীর কোনও ধাঁধা নয়, প্রতিষেধমূলক ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হবে । শিশু মৃত্যু ও মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার হ্রাস করার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে । জনস্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে । প্রাথমিক থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে ত্রুটিমুক্ত করা হবে । স্বাস্থ্যের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে । ওষুধের দাম যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস গ্রহণ করা হবে।”

ইস্তাহারে খাদ্য সুরক্ষার উপর বিশেষ জোর দিয়েছে বামফ্রন্ট ৷ তাদের দাবি, গরিবদের জন্য ২ টাকা কেজি দরে চাল বা গম প্রতি মাসে ৩৫ কেজি করে প্রতিটি পরিবারকে সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে । ডাল, চিনি, ভোজ্য তেল, কেরোসিন তেলের মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্য বাজার থেকে কম দামে নিয়মিত সরবরাহ করা হবে।

বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে রাজ্যে কিছুতেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনপিআর কার্যকর হতে দেওয়া হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামফ্রন্ট ৷ বেতন বৈষম্য দূর করতে তাদের টোটকা, সমকাজে সমমজুরি। ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, নারী নির্যাতন, গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধে শহরে ওয়ার্ড বা বরোতে এবং গ্রামবাংলায় ব্লক স্তরে বিশেষ সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের (LGBTQIA+) জন্য প্রয়োজনীয় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করারও আশ্বাস দিয়েছে বামফ্রন্ট ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*