ফের অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, সংঘর্ষে মৃত ৯৮, মন্ত্রী, সাংসদের বাড়িতে হামলা

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি :- কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর এবার শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ফের অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলছে ওপার বাংলার বিভিন্ন জায়গায়।
রবিবার থেকে আওয়ামি লিগ, ছাত্রলিগের নেতাকর্মীদের উপরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হামলা চালানো হয়েছে। নতুন করে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। রবিবার সারা দিনে দেশের একাধিক মন্ত্রী, শাসকদল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সংসদ সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিক্ষোভকারীদের সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে পুলিশ। মন্ত্রীদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করা হয়েছে। আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক বাড়িতে। সঙ্গে থানা-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে।
জানা যাচ্ছে, নিহত ৯৮ জনের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৪ জন পুলিশ নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের ১৩ জন সদস্য এবং কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে আরও একটি হামলায় হাইওয়ে থানার এক পুলিশ কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্ফু জারি হয়েছে। রবিবার থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাবনা, সিলেট, ফেণী, বগুড়া, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সহ একাধিক এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারকে সমর্থনকারী আওয়ামি লিগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সেদেশের অন্তত ৫০টি জেলায় হিংসার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দিনভর লাঠিসোঁটা সহ পিস্তল, বন্দুকের মতো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রাস্তায় সংঘর্ষের ছবি ধরা ধরেছে। আহত হয়েছে কয়েকশো মানুষ। পড়ুয়াদের অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে রবিবার রাজধানী ঢাকা সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বন্ধ ছিল দূরপাল্লার বাস, ট্রেন সহ অন্যান্য গণপরিবহনও।
আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি নেতা-মন্ত্রীদের বাসভবনে হামলা ও আগুন লাগিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। আবার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছুঁড়েছে, এমন অভিযোগও সামনে এসেছে। শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে রবিবার রাজধানী ঢাকা সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বন্ধ ছিল দূরপাল্লার বাস, ট্রেন সহ অন্যান্য গণপরিবহনও।
শনিবার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন ছাত্র নেতারা। রবিবার আন্দোলনের মাত্রা তীব্রতা মাত্রা ছাড়ায়। পুলিশ, আধা সেনা ছাড়াও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে আওয়ামী লিগ সমর্থকদেরও। মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে ঢাকা সহ ১৪টি জেলায়। গুজব আটকাতে ফেসবুক ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও চালু আছে।
উল্লেখ্য, সরাসরি নেতা, মন্ত্রীদের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রথম আলো জানাচ্ছে, চাঁদপুরে বাংলাদেশের সমাজ কল্যাণমন্ত্রী দীপু মনির বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। চাঁদপুর পুরসভার কার্যালয়েও ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া, কালীবাড়ি পুলিশ কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বরিশালের নবগ্রাম রোডে দেশের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতেও ঢুকে পড়েছিলেন আন্দোলনকারী ছাত্রেরা। ফারুক বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্যও বটে। তাঁর বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। বাড়ির সামনে থাকা মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলাকারীদের থামাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। ময়মনসিংহে দেশের প্রাক্তন গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের বাড়িতেও বাইরে থেকে ঢিল ছুড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আওয়ামী লীগের অন্তত ২০টি কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁর বাড়ির এসি, জানলার কাচ, ফুলের টব রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের বাড়িতেও। এ ছাড়া, সারা দেশে অনেক থানা এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রবার বুলেট এবং ছররা গুলিও ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ছাত্রদের আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করতে চায় হাসিনা সরকার। রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম আলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার ই আলম সরকারকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হাসিনা ‘নৈরাজ্য’ দমনে এগিয়ে আসার জন্য দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসিনা বৈঠকে বলেন, ‘‘যাঁরা হিংসা চালাচ্ছেন, তাঁরা কেউই ছাত্র নন, তাঁরা সন্ত্রাসবাদী।’’ রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্ফু জারি করা হয়েছে বাংলাদেশে। সোমবার থেকে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*