সম্প্রতি সরকারি চিঠি সোশ্যাল মাধ্যমে পোস্ট করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। আরও বেড়েছে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত। নতুন বছরে যখন অনেকেই সংকল্প নিচ্ছেন ‘DO’s and DO NOT’-এর তখন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে রাজ্যের মানুষকে বার্তা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই প্রস্তুতিই বিতর্ক উসকে দিয়েছে। যে স্থানে বসে বসে তিনি নতুন বছরের বার্তা দিচ্ছেন তা অবিভক্ত ভারতের এক কালো ইতিহাস।
কি সেই ইতিহাস? সে ইতিহাস বাংলা ভাগের। ১৯০৫ সালে এতে শিলমোহর দেওয়ার জন্য যে চেয়ারে বসে তৎকালীন বাংলার বড়লাট বাংলা ভাগের কপি সই করেছিলেন সেই চেয়ারে বসেই বাংলার আজকের ‘বড়লাট’ নতুন বছরের বার্তা দিতে নেমে পড়েছেন। তাঁর টুইটারে জগদীপ ধনকর লিখেছেন , ‘Recording of New Year Message for the people of State of West Bengal in the historical Raj Bhawan Library while sitting on the iconic table from which Lord Curzon signed first Partition of Bengal in 1905.’ বঙ্গানুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায় , ‘রাজভবনের ঐতিহাসিক লাইব্রেরিতে বসে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য নতুন বছরের বার্তা নথিভুক্ত করছি। আমি এই বার্তা লিখছি সেই ‘আইকনিক’ চেয়ার বসে যেখানে বসে লর্ড কার্জন বাংলা ভাগের প্রতিলিপিতে সই করেছিলেন। এখানেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন , একেই এন আর সি , সি এ এ নিয়ে তুঙ্গে রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতি। রাজ্য সরকারের বহু জনপ্রতিনিধি তাঁদের বিভিন্ন বিবৃতিতে রাজ্যপালকে কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী বলে প্রতিপন্ন করেছেন। আবার বাংলা তথা দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখতে চাইছে না বিজেপি, এমন প্রশ্নও তুলছে বিভিন্ন অবিজেপি রাজ্যগুলি। এমন এক তালগোল পাকানো সময় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার প্রেরিত পশ্চিমবঙ্গের নব নির্বাচিত রাজ্যপালের এমন বাংলা ভাগের স্মৃতি উসকে দেওয়া টুইট আগুনে ঘি ঢালতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আবারও বিতর্কে জড়াতেই পারেন ধনকর। সর্বোপরি আবারও খবরের কেন্দ্রে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেও অনেকে মনে করছেন।
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মাধ্যমে ধনকরের এই টুইট ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিহাসের পাতা খুলে নতুন বছরের বার্তা দিতে গিয়ে কোথাও যেন সেই বাংলা ভাগকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন রাজ্যপাল এমন কথা বার্তা লিখে সোশ্যাল মাধ্যমে পোস্ট হতে শুরু করেছে। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর অখণ্ড ভারতবর্ষের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের আদেশে প্রথম বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন হয়। বাংলা বিভক্ত করে ফেলার ধারনাটি অবশ্য কার্জন থেকে শুরু হয়নি। ১৭৬৫ সালের পর থেকেই বিহার ও উড়িষ্যা বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে সরকারী প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বাংলা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায় এবং বৃটিশ সরকারের পক্ষে এটির সুষ্ঠু শাসনক্রিয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। বঙ্গভঙ্গের সূত্রপাত এখান থেকেই।
১৯১১ সালে, প্রচণ্ড গণআন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বঙ্গভঙ্গ রহিত হয়। দ্বিতীয়বার বঙ্গভঙ্গ হয় ১৯৪৭ সালে। এর ফলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে যুক্ত হয়। এই পূর্ববঙ্গই পরবর্তীকালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ও বাংলাদেশের জন্ম হয়।
Be the first to comment