বাংলায় একশো দিনের কাজের বরাদ্দ ‘শূন্য’, রিপোর্ট গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি :- একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র এই নিয়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে অভিযোগ তৃণমূলের। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বারংবার এই অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শাসক দলের একাধিক নেতা মন্ত্রীরা। অন্যদিকে, বিজেপির তরফ থেকে বারংবার দাবি করা হয়েছে ‘বেনিয়ম’ করার জন্যই রাজ্যের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে বিজেপি নেতাদের, দাবি বাংলা যতক্ষণ না পুরনো হিসাব দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন করে ওই খাতে যেনো টাকা না পায়।
লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের শাসক দল একশো দিনের কাজের টাকা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে যে আরও জোরদার আন্দোলনে নামতে চায়, তার ইঙ্গিত মিলেছে বুধবার সকাল থেকেই। একের পর এক নেতা-মন্ত্রী সমাজমাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে চলতি অর্থবর্ষেও যে বাংলার জন্য ওই খাতে কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি, সেই অভিযোগ করছেন।


প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফ থেকেও স্বীকার করা হয়েছে বাংলাকে যে এই অর্থবর্ষে কোনও টাকা দেওয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসোয়ান লিখিতভাবে সংসদে জানান, এর আগের দু’টি অর্থবর্ষেও বাংলার জন্য বরাদ্দ ‘শূন্য’ ছিল।
তৃতীয় মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম লোকসভা অধিবেশন থেকেই সংসদে একশো দিনের কাজের টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। পাশাপাশি, দলের সাংসদ সৌগত রায়, খলিলুর রহমান, মালা রায় এবং দেব লিখিত ভাবে প্রশ্ন জমা দেয়। সূত্রের খবর, ওই একই প্রশ্ন তোলেন কেরলের সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের মুখ্যসচেতক কদিকুন্নিল সুরেশ। জানা যাচ্ছে, দুই দলেরই মুখ্য প্রশ্ন ছিলো, কেন্দ্রীয় সরকার কি পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের মতো আরও রাজ্যের এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে? গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বুধবার লিখিত জবাব দিয়েছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেরল নয়, শুধু পশ্চিমবঙ্গের টাকাই আটকে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২১-’২২, ২০২২-’২৩ এবং ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের টাকা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যের পাওনা নেই।


ওই জবাবে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে বাংলাকে কেন্দ্র ওই প্রকল্প বাবদে ৪,১৩৭ কোটি টাকা এবং পরের অর্থবর্ষে ১,৪১৬ কোটি টাকা দেয়। এর পরে টাকা দেওয়া বন্ধ হয় ২০২২ সালের ৯ মার্চ থেকে। তার কারণ হিসাবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ না মানার জন্যই বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের জন্য তৈরি ২০০৫ সালের আইনের ২৭ ধারায় এ ভাবে টাকা আটকে দেওয়ার সংস্থান রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। অন্য দিকে, তৃণমূলের পক্ষে বারংবার দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরই বিজেপি ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ হয়ে বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে।
কত টাকা আটকে বাংলার, সেই হিসাবও দেওয়া হয়েছে সংসদে পেশ করা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের জবাবে। অনেক রাজ্যেরই বড় অঙ্কের বকেয়া থাকলেও বাংলার প্রাপ্য সবচেয়ে বেশি। শুধু একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের মজুরি বাবদই বাংলার বকেয়া ২,৭৬৫ কোটি টাকা। আর কাজের উপাদান বাবদ বাংলার আটকে থাকা প্রাপ্য ২,৭৮৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাংলার বকেয়া ৫,৫৫৩ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, যখন মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন লোকসভায় দাবি করেন, কোনও রাজ্যকেই বাজেটে বঞ্চিত করা হয়নি। ঠিক তার এক দিন পরে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে পর পর চারটি অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজে দেশের কোন রাজ্যের জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ২০২১-’২২ থেকে ২০২৫ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত বরাদ্দের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বাংলার জন্য পর পর তিনটি অর্থবর্ষে একটি টাকাও বরাদ্দ হয়নি। শেষ বার ২০২১-’২২ সালে বরাদ্দ হয়েছিল ৭,৫০৭.৮ কোটি টাকা। ২০২২-’২৩, ২০২৩-’২৪ এবং ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে কোনও বরাদ্দ হয়নি।


বাজেট অধিবেশনে বিরোধীরা যেসব প্রশ্ন তোলেন, মঙ্গলবার তার জবাবি বত্তৃতা করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তারপরই তৃণমূলের সাংসদরা দাবি করেন, তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে সুকৌশলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন এড়িয়ে যান, ওয়াক আউট করেন তৃণমূল সাংসদেরা। তার পরেই আরও এক বার একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তোলেন অভিষেক। পাশাপাশিই এক্স হ্যান্ডলে ট্যুইট করেন, ‘‘১৩৮ দিন, ৩,৩১৯ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও শ্বেতপত্র প্রকাশিত হল না।’’ প্রসঙ্গত, গত ১৪ মার্চ শ্বেতপত্রের দাবিতে প্রথম পোস্ট করেছিলেন অভিষেক।
গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের রিপোর্ট আসার পর থেকেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অসত্য’ দাবি নিয়ে সরব হন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার সংসদে নতুন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ নিয়ে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এই তহবিলের টাকা অন্য খাতেও খরচ হয়েছে। যেটা নিয়ম নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। আর রাজ্য সরকার অভিযুক্তদের আড়াল করেছে। আমরা জনতার টাকা কাউকে খেতে দিতে পারি না।’’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*