বুদ্ধবাবু চলে গেলেন রয়ে গেলো তাঁর সাদা অ্যাম্বাসাডরটা, ছল ছল চোখে দাঁড়িয়ে রইলো ‘সারথি’ও

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি:-

আচমকা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা। শোকস্তব্ধ গোটা রাজনৈতিক মহল। বুদ্ধবাবুর প্রয়াণের খবর আসার পরই ভিড় বেড়েছে তাঁর পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে। আর এই সবের মধ্যেই ঠায় দাঁড়িয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাদা অ্যাম্বাসাডরটা। নিজের গোটা রাজনৈতিক জীবন এবং মন্ত্রিত্বে থাকাকালীন সব সময় এই গাড়িতেই চড়েছেন বুদ্ধবাবু। আর বোধহয় এই গাড়ির চাকা গড়াবে না।
Gov of West Bengal লেখা WB060002 লেখা নাম্বার প্লেটের সাদা অ্যাম্বাসাডরটা এলেই সবাই বুঝে যেতেন বুদ্ধবাবু আসছেন। কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ হোক, রাজনৈতিক মঞ্চ বা সরকারি কোনো কাজে অবিচল তার গাড়ি। শেষবার যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সেই সময়ও তাঁর সঙ্গী ছিল সাদা অ্যাম্বাসাডর। বুদ্ধবাবু চলে গিয়েছেন চিরকালের মতো। তবে রয়ে গেল তাঁর সঙ্গী এবং সারথী।
দীর্ঘ ৩৫ বছর কাটিয়েছেন বুদ্ধবাবুর সাথে গাড়ির চালক মহম্মদ ওসমান। ১৯৮২ থেকে ২০১৬, তাঁর গাড়ির চালক ছিলেন। ওসমানের কথায়, “বুদ্ধদা আমায় কোনো দন আপনি ছাড়া ডাকেন নি”। তিন বলেন, ‘১৯৮৭ সালে বুদ্ধবাবু আমাকে ডেকে নেন। সেই থেকে তিনি যে পদেই গেছেন, আমাকে সঙ্গে রেখেছেন। ’ সরকারি চাকরির সূত্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ছেড়ে যেতে হলেও তার মন কিন্তু বাঁধা থাকবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ও পাম এভিনিউয়ে বুদ্ধদেবের সরকারি ফ্লাটটিতে।
ওসমানের বাড়ি বিহার রাজ্যের মোজাফ্ফরপুর জেলার বোচাহার থানার উনসারটোলাপারাতি গ্রামে। ১৯৭১ সালে ভাগ্যের অন্বেষনে কলকাতায় আসেন। প্রথম কিছুদিন নানা স্থানে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ান। মুটে-মজুরের কাজও করেন বেশ ক’বছর। পরে একসময় ঠেলাগাড়িও চালান। এরপর এক বন্ধুর সাহায্যে গাড়ি চালানো শেখেন। ১৯৮২ সালে গাড়িচালক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাকরির সুযোগ হয় ওসমানের। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে কমিউনিস্ট নেতা আব্দুল রসুল, প্রয়াত সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সরোজ মুখার্জি ও শৈলেন দাশগুপ্তের গাড়ি চালানোর সুযোগ পান। পশ্চিমবঙ্গ সফরে এলে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ও ভারতের মধ্যে প্রথম কেরালা রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ইএমএস নাম্বুদ্রিপাদের গাড়িও চালান ওসমান। ওসমান বলেন মন্ত্রী হওয়ার পর বুদ্ধদা একদিন সরোজদাকে বললেন, ওসমানকে আমি সঙ্গে রাখতে চাই। সরোজদা বললেন, সেটা কী করে হবে। পার্টির জন্য আমরা ওকে নিয়েছি। সরকারি জায়গায় চলে গেলে কী করে হবে। সত্যি কথা বলতে, কী আমিও বুদ্ধদার সঙ্গ ছাড়তে চাইতাম না। কিন্তু কাউকে বলতে পারিনি। বুদ্ধদা আমাকে নিজের সঙ্গে রাখতে চাইছে জেনে আমি একজনকে দিয়ে সরোজদাকে জানালাম, আমিও বুদ্ধদার সঙ্গেই থাকতে চাই। যেদিন উনি মন্ত্রী থাকবেন না, সরকারি গাড়ি ছেড়ে দেবেন, সেদিন আমিও সরকারি চাকরি ছেড়ে পার্টির কাজে চলে আসব। সেই থেকে শুরু। এরপর থেকেই বুদ্ধদেবের নিত্যসঙ্গী হয়ে যান তিনি। পাহাড় থেকে সাগরের তীর- বুদ্ধদেবকে সর্বত্রই নিরাপদে নিয়ে গেছেন ওসমান। তাঁর কথায়, ১৯৯৬ সালে কালাজ্বর নিয়ে আমি নার্সিংহোমে ভর্তি। বুদ্ধদা প্রতিদিন দু-বেলা আমাকে দেখতে যেতেন এবং ডাক্তারদের কাছে আমার চিকিৎসার খোঁজখবর নিতেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*