মানুষ বলছে, এক, দুই, তিন, বিজেপিকে বিদায় দিন, এটা বাংলার সংস্কৃতি- সভ্যতার জয়; মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Spread the love

কালিয়াগঞ্জ, খড়গপুর ও করিমপুরের বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচনে জয়ের ধারা বজায় রাখল তৃণমূল কংগ্রেস।

নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া:

সম্পূর্ণ কৃতিত্বটাই আমি মনে করি সাধারণ মানুষের, আমাদের ভোটারদের, যারা কষ্ট করে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন, আমার মা-ভাই-বোনদের, বয়োজ্যেষ্ঠ, প্রবীণ, নবীন, সমস্ত জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ সবাই মিলে।

এটা মানুষের আশির্বাদ, দোয়া এবং শুভকামনা এই সবুজ জয় এবং সবুজ ঝড়ের নেপথ্যে আছে। আমি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে আসব। আমি কালিয়াগঞ্জ, খড়্গপুর ও করিমপুরে যাব সময় করে।

এত ঔদ্ধত্য, এত অহঙ্কার ভাল নয়। বিজেপি-র বড্ড ঔদ্ধত্য এবং অহঙ্কার। কখনও বলছে NRC করব, কখনও বলছে মানুষকে বিতাড়িত করব, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেব। কেন? সবাই তো নাগরিক, সবার অধিকার আছে, এতদিন ধরে দেশে আছে তাদের অধিকার নেই?

আমাদের সংবিধানের তো ৭০ বছর হয়ে গেল। আমরা সবাই ভোট দিই, সবাই নাগরিক, সবাই ভোটার। নতুন করে এই যে খেলা, মানুষকে মানুষের সাথে ভাগ করে দেওয়া, মানুষকে অত্যাচার করা, সন্ত্রাস করা, এটা ঠিক না।

আর এই যে সমস্ত রাজ্য থেকে বাংলার লোকদের বার করে দেওয়া হচ্ছে, কর্ণাটক থেকে কয়েকদিন আগেও দেখেছিলাম বাংলার মেয়েদের বেড় করে দিয়েছে। কাশ্মিরে ছেলেগুলো মারা গেল এইভাবে; তাদের কেউ একটু সাহায্য করল না। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ওই পরিবারগুলোকে সাহায্য করেছি। কিছু না হোক মানুষের সুখের দিনে না থাকলেও দুখের দিনে তো পাশে আছি। সুতরাং আমি মনে করি বিজেপির এই ঔদ্ধত্য, অহংকার ঠিক নয়।

কংগ্রেস ও সিপিএমেরও বোঝা উচিত। আর কত দিন এরা বিজেপির সাথে খেলে করবে। এরা বিজেপির দরজায় গিয়ে ভিক্ষা না চেয়ে নিজেদের তো স্বাবলম্বী করতে পারে। আমার খুব খারাপ লাগছে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আমরা কংগ্রেসকে সমর্থন করি। কিন্তু এখানে এরা বিজেপির সাথেই চলে। এটা আমাদের খুব খারাপ লাগে।

এই ফলাফলে মানুষ বলছে, এক, দুই, তিন, বিজেপিকে বিদায় দিন। এটা বাংলার সংস্কৃতি, সভ্যতার জয়।

কালিয়াগঞ্জে যেমন সংখ্যালঘু ভোটার আছে তেমন রাজবংশী ম্যাক্সিমাম আছে। লোকসভা নির্বাচনের সময় আমরা দেখেছিলাম রাজবংশী ভোটারদের কাছে আমাদের নামে নানারকম ভুল বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু এবারে তারা তা বুঝতে পেরে আমাদের ভোট দিয়েছেন। সংখ্যালঘু, হিন্দু, তফসিলি, আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন। করিমপুরে আপনারা দেখেছেন ভীষন ভালোভাবে আমরা জিতছি।

তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পরে বিগত ২২ বছর আমরা খড়গপুর ও কালিয়াগঞ্জে কখনও জিতিনি। এই প্রথম এই দুটি আসনে আমরা জিতেছি। এটা মানুষের একটা বিরাট কৃতিত্ব ও জয়। এই জয় মানুষকে উৎসর্গ করে আরো ভালোভাবে কাজ করতে হবে।

খড়গপুরে অবাঙালিরাও আমাদের ভোট দিয়েছেন। তারাও বাংলার মানুষ, আমাদের গর্ব। কালিয়াগঞ্জে রাজবংশীরা ভোট দিয়েছেন, তারাও বাংলার মানুষ। সংখ্যালঘুরাও ভোট দিয়েছেন, তারাও বাংলার মানুষ। হিন্দুরা যারা বাংলায় থাকেন, তারাও বাংলার মানুষ। সকল সম্প্রদায়, সকল জাতির মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন।

বিজেপি মানেই এখন দুঃশাসন, দুর্বৃত্ত। মানুষ চায় ভালোটা হোক, খারাপটা বিদায় নিক। এই তিন চার মাস ধরে এতো অহংকার, যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে, যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে। মানুষকে সামান্য সম্মানটুকু দেয় না।

আমি ৭ বার সাংসদ হয়েছি, ২ বার বিধানসভা নির্বাচনেও জিতেছি। আমি এতোদিন ধরে রাজনীতি করি। এখানে একজন বিজেপির নেতা এসেছেন একটা নমস্কার বা একটা হাসি পর্যন্ত নেই মুখে। জনগণের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে গালাগালি দিয়ে চলে যাচ্ছেন। বাংলার সংস্কৃতিতে এইরকম কোনওদিন হয় নি। বাংলার সংস্কৃতিতে বিরোধি দলের লোকদের ডাকা হলে আমি যেচে কথা বলি। আমরা সৌজন্যতা জানি।

বাংলার মানুষ বুদ্ধিমান। তারা সব সময় প্রয়োজন মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভবিষ্যতের কথাও তাই মানুষের উপরেই ছেড়ে দিন। মানুষই সিদ্ধান্ত নেবেন। মানুষের প্রতি আমার ভরসা আছে, বিশ্বাস আছে। যদি কখনো ভুল হয়ে যায়, তারা সমালোচনা করবেন। এটা আমি স্বাগত জানাই। আবার যখন ভালো কাজ করব, তারাই প্রশংসা করবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*