চিরন্তন ব্যানার্জি :- দৃশ্য দূষণ বন্ধ করতে এবার বিজ্ঞাপন নীতিতে বড়সড় বদল আনতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। শুক্রবার মেয়র পারিষদ বৈঠকে সীদ্ধান্ত হয়েছে, আর পুরোনো মান্ধাতার আমলে স্ট্রিট হোর্ডিং থাকবে না। তার বদলে বিদেশের মতো তিলোত্তমা সাজবে মনো-পোল হোর্ডিংয়ে। মেয়র পারিষদ সদস্য (বিজ্ঞাপন) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, “সিঙ্গল পিলারে এই ধরনের হোর্ডিং লাগানোর সুবিধা অনেক। প্রথমত তা সহজেই চোখে পড়ে গাড়ির চালকের। ফলে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলির উদ্দেশ্য সফল হবে। দ্বিতীয়ত, একটি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে থাকা মনো-পোল হোর্ডিং অনেক বেশি মজবুত। চট করে তা ঝড়ের ধাক্কায় ভেঙে পড়বে না।” এর পাশাপশি এদিনের বৈঠকে আরও একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, একটা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে আরেকটি বিজ্ঞাপনের ন্যূনতম দূরত্ব থাকবে ৮ ফুটের মতো। এর ফলে শহর কলকাতায় আর দেখা যাবে না গায়ে গায়ে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই শহরে বেসরকারি হোর্ডিং কমতে শুরু করবে। এর পাশাপশি নো হোর্ডিং জোন করা হয়েছে কলকাতার ডালহৌসি চত্বরকে।
এর সঙ্গে চমক থাকছে আরও একটি। সূত্রের খবর, এই প্রথম শহর কলকাতা হতে চলেছে থ্রি ডি হোর্ডিং। দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটির সামনে সেটি লাগানো হবে বলে জানান বিজ্ঞাপন দফতরের এক আধিকারিক। তিনি বলেন থ্রি ডি সিনেমার মতো এই হোর্ডিং দেখলে মনে হবে যেন চরিত্রগুলো বাইরে বেরিয়ে আসছে। তিনি আরও জানান, শহরে এবার শুরু হবে এলইডি হোর্ডিং। মহানগরকে আলোকোজ্জল করতেই এই সীদ্ধান্ত। এর জন্য এলইডি হোর্ডিংয়ের রেট কমিয়ে করা নতুন হয়েছে ৫০০ টাকা প্রতি বর্গফুট। যেটা আগে তা ছিল ১৬০০ টাকা প্রতি বর্গফুট।
শহরে এই মুহূর্তে বেসরকারি ডিজিটাল হোর্ডিং রয়েছে হাতে গোনাল মাত্র ছ’-সাতটা। নয়া ছাড়ে সে সংখ্যাও বাড়বে বলে আশা করছে পুরসভা। পুরোসভার আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে এবার বিজ্ঞাপন দফতর থেকে আয় বাড়ানোর চিন্তাও করেছে পুরসভা। সেই মতো পুরোসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, মেট্রোর থামে বিজ্ঞাপন লাগাতে গেলে সেই বিজ্ঞাপনের পঞ্চাশ শতাংশ রাজস্ব এবার থেকে পুরসভাকে দিতে হবে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডকে ইতিমধ্যেই এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছে পুরসভা। একাধিক পেট্রোল পাম্পে তারা নিজেদের বিজ্ঞাপন লাগিয়ে রেখেছে। পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতরের আধিকারিক জানিয়েছেন, মেট্রোর থাম হোক অথবা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন। সমস্ত বিজ্ঞাপনই রাস্তার উপরে। এই রাস্তার দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার। ফলে তাদেরও এবার থেকে অর্ধেক রাজস্ব দিতে হবে।
এছাড়াও এদিনের বৈঠকে সীদ্ধান্ত হয়, শহরে বেআইনি নির্মাণে অথবা যে সমস্ত বাড়িতে পুরসভার ‘বিপজ্জনক’ নোটিস লাগানো রয়েছে, সেখানে আর বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। এবং নতুন নির্মিত কোনও বাড়ির ছাদে বড় হোর্ডিং লাগানোর আগে খতিয়ে দেখা হবে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের ছাড়পত্র। বিজ্ঞাপন দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, “বড় হোর্ডিংয়ের ওজন অনেক। সেক্ষেত্রে ভরসা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের শংসাপত্র। আগামীতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তাকেই ধরা হবে।”
Be the first to comment