‘রাজ্যপাল স্বেচ্ছায় বিধানসভায় আসতে চাইলে ভেবে দেখা হবে’, সংঘাত চরমে

Spread the love

রাজ্যপাল নিয়ে কড়া অবস্থান বিধানসভার স্পিকারের। বুধবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্যপাল ভবিষ্যতে বিধানসভায় আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলে, তা ভেবে দেখা হবে। আর তাতেই রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত নতুন মোড় নিল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ভাষণের ভিডিয়ো ফুটেজও চেয়েছেন স্পিকার। সংবাদমাধ্যমের কাছে তা চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।

স্পিকার জানিয়েছেন, রাজ্যপাল যদি নিজে বিধানসভায় আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাহলে বিধানসভা কর্তৃপক্ষ তাঁর আসার কারণ খতিয়ে দেখবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে স্পিকার ঘুরিয়ে বলে দিলেন, রাজ্যপাল আর নিজের ইচ্ছায় বিধানসভায় আসতে পারবেন না।

যুক্তি হিসাবে বিধানসভা কর্তৃপক্ষ যে কথা বলছে, তা হল ২৫ জানুয়ারি বি আর আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করতে এসে রাজ্যপাল যেভাবে স্পিকারকে আক্রমণ করেছেন, তা নজিরবিহীন। রাজ্যপালের আচরণ একেবারেই অসৌজন্যমূলক ছিল বলে দাবি করেন স্পিকার। জগদীপ ধনখড় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা অন্তত রাজ্যপাল হিসাবে তাঁকে মানায় না বলেই মন্তব্য করেন স্পিকার।

স্পিকারের আরও বক্তব্য, রাজ্যপালের কিছু বলার থাকতেই পারে। কিন্তু সেরকম হলে তিনি রাজভবনে ডেকে তাঁকে তা বলতেই পারতেন। প্রসঙ্গত, ২৫ জানুয়ারি স্পিকারের পাশে দাঁড়িয়েই রাজ্যপাল মন্তব্য করেছেন যে, বিধানসভা কর্তৃপক্ষ সংবিধানকে মান্যতা দিচ্ছে না।  তার প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের বিষয়ে কঠোর অবস্থান বিধানসভার। স্পিকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পরবর্তীকালে যদি রাজ্যপালের তরফ থেকে এমন কোনও ইচ্ছা প্রকাশ করা হয় যে তিনি বিধানসভায় আসতে চান, তা ভেবে দেখা হবে।

রাজ্যপাল ২৫ জানুয়ারি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তার ভিডিয়ো ফুটেজ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছেন স্পিকার। সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখার পরই তিনি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।

স্পিকার বলেন, “আগের রাজ্যপাল বাংলার অনেক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন। তখনও প্রেস ছিল, মিডিয়া ছিল। তিনি প্রেস কর্নারে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁরা কেউ এই ধরনের আচরণ করেননি। ওঁ নিজে আসতে চেয়েছিলেন বিধানসভায়। তাঁকে আমরা মর্যাদা দিয়ে এনেছি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি, তিনি এই প্ল্যাটফর্মকে একটা পলিটিক্যাল বক্তব্য রাখার জন্য ব্যবহার করবেন। আপনাদের কাছে সিডি চেয়ে পাছিয়েছি। সেটা খতিয়ে দেখব। গতকাল আমি পিছনে ছিলাম বলে শুনতে পাইনি ওঁ কী বলেছেন। সেটা দেখার পর কী করব, পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেব।” স্পিকারের সংযোজন, “আরেকটা কথা স্পষ্ট বলি, ওঁ আসতে চাইলে দেখব কী কারণে আসতে চান। ওঁর কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সেখানে তো ওঁকে আসতেই হবে। আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় স্বতোঃপ্রণোদিতভাবে বিধানসভায় আসতে চাইলে আমরা জানতে চাইব তিনি কেন আসতে চাইছেন? ”

প্রসঙ্গত, রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত তৈরি হয়েছে, এই দৃষ্টান্ত অতীতেও রয়েছে। যেমন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, যিনি ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলার রাজ্যপাল ছিলেন। একাধিক ইস্যুতে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বাদানুবাদ হয়। কিংবা তারও আগে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা অজয় মুখোপাধ্যায়ের যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে হইচই ফেলে দেন রাজ্যপাল ধরমবীর। কিন্তু রাজ্যপাল বনাম স্পিকারের এই সংঘাত নজিরবিহীন। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কর্তৃপক্ষ কিংবা স্পিকারকে আক্রমণ, এই নজির কিন্তু পূর্বে বাংলায় দেখা যায়নি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক বক্তব্য স্পিকারের। যেটা এই রাজ্যের পক্ষে সংবিধানের পক্ষে যথেষ্ট দুর্ভাগ্যজনক। একজন স্পিকার তাঁর ক্ষমতার দায়রা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই তিনি এই ধরনের মন্তব্য করছেন। রাজ্যপালের গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বা বিধানসভায় রাজ্যপালের আগমন আটকানোর ক্ষমতা কিন্তু স্পিকারের নেই। এটা বুঝতে হবে স্পিকার বিধানসভাটুকু চালান, এটা তাঁর বাড়ি নয়। তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তিও নয়। সংবিধানের একটা পীঠস্থান।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*