সংকটের সময়ে ‘বরফ গলছে’ সম্পর্কে, কালীঘাটে দীর্ঘক্ষণ মমতার সঙ্গে বৈঠক সারলেন ‘সেনাপতি’ অভিষেক

Spread the love

 চিরন্তন ব্যানার্জি:-

বর্তমানে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশ। এই সংকটের সময়ে ‘বরফ গলছে’ সম্পর্কে। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় যখন উত্তাল পরিস্থিতি। ঠিক তখনই পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় দীর্ঘক্ষণ কালীঘাটের বাড়িতে একান্তে বৈঠক সারলেন মমতা – অভিষেক। দলীয় সূত্রের খবর, বেশ কিছু রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিষয়, যে গুলোর মধ্যে দিয়ে দুজনের সম্পর্ক ‘ঠান্ডা’ হয়ে গিয়েছিলো, সেই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্রের খবর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রদবদলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
গত ১৪ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে তাণ্ডবের রাতে পুলিশি হস্তক্ষেপ ও দলমত নির্বিশেষে গ্রেফতারির দাবি করে বার্তা দিয়েছিলেন অভিষেক। সূত্রের খবর, তারপরে চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ নিয়ে প্রশাসনের নানা পদক্ষেপে দলের অন্দরে নিজের অসন্তোষও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে আগের দু’-এক বারের মতো এ বারেও ‘সরে’ ছিলেন অভিষেক। এই ‘সঙ্কটে’র সময়ে তাঁর ওই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে নেতৃত্বের তরফে একাধিক বার্তাও গিয়েছে তাঁর কাছে। এরপরেও রাজনৈতিক উত্তাপ তো বটেই, চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় নাগরিক সমাজের ক্ষোভের মুখেও সরকার ও দল নিয়ে বেশ খানিকটা ‘নিরাকাঙ্ক্ষ’ই ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। শুধু তা-ই নয়, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গোড়া থেকেই পুলিশ ও প্রশাসনের কিছু ‘ভুল’ পদক্ষেপ নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, এই রকম সময়ে তাঁর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন দলেরই একাংশ। নানা চর্চা দানা বাঁধছিল তৃণমূলে। নেতৃত্বের একাংশ মনে করছিলেন, সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে অভিষেকের এই ভূমিকায় পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় আচমকাই কালীঘাটে বৈঠকে বসেন তৃণমূল সুপ্রিম ও তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অভিষেক তাঁর মত সবিস্তার জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রীকে। মমতাও আশু কর্তব্যের বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলেছেন তাঁর সঙ্গে। দলের এক নেতার কথায়, “এই আলোচনা দল তো বটেই, প্রশাসনের জন্যও অত্যন্ত ইতিবাচক।”
অভিষেকের ‘নিস্পৃহতা’য় দলের নীচের তলাতেও অব্যবস্থা স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে অভিষেকের অবস্থান নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছিল দলে। নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, অভিষেক এই ভাবে ‘নিস্পৃহ’ থাকলে সরকার-বিরোধী প্রচারকেই সাহায্য করা হবে। ‘সেনাপতি’ হিসেবে অভিষেকের সক্রিয়তা চেয়ে দলেরই একাংশ সমাজমাধ্যমে ‘অনুরোধ’ করতে শুরু করেছেন, যা তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াতে শুরু করেছে।
দলীয় সূত্রের খবর, এই রকম সময় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থার প্রধান প্রতীক জৈনের সঙ্গেও দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। এরপরই মমতা অভিষেকের বৈঠকের সলতে পেকেছে। জানা যাচ্ছে, এরপরই মুখোমুখি দুজনের কথোপকথনের পরেই গোটা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের রণকৌশল তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, ওইদিন অভিষেকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক শেষে আরজি কর সংক্রান্ত একটি বিষয়ে দলের নেতা কুণাল ঘোষকে ডেকে পাঠান মমতা। এবং প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদকের সাথেও বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*