স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে ব্যস্ত যুযুধান দুই পক্ষ

Spread the love

পিয়ালি আচার্য

সামনে বাঙালীর প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। যদিও করোনা আবহে এবারের পুজো “অন্য পুজো”। আর বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। যদিও পুজোর বাদ্যি বাজার জন্য থেমে থাকছে না নির্বাচনের দামামা।

২১-এর একুশে বিজেপিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ধূলিসাৎ করে দিয়ে জনজোয়ারে ভাসবে মহানগর। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইরকমই বার্তা দিয়েছিলেন এবারের ২১ জুলাই ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে। নির্বাচনের সুর তখন থেকেই বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সুরে সুর মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বাকি নেতারা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।

দলীয় ও প্রশাসনিক বৈঠক করে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন উন্নয়নের খতিয়ান দিয়েছেন, তেমনি কেন্দ্র বিরোধী আক্রমণ তীব্রভাবে শানিয়েছেন।

আর তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একুশের নির্বাচনকে দেখছেন চ্যালেঞ্জ হিসাবে। তাই ২৫ জুলাই ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন দলীয় বিধায়কদের নিয়ে। এটা ছিল পর্যালোচনা বৈঠক। ২ অক্টোবর আবার ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছেন অভিষেক। নির্বাচনের আগে বিধায়ক এবং শাখা সংগঠনের প্রধানদের বুস্ট আপ করার পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে-নিচু তলায় ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তা শুধরে নেওয়ার প্রক্রিয়া এই বৈঠকে প্রাধান্য পাবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারনা।

অন্যদিকে বিজেপিও একুশকে পাখির চোখ করে নির্বাচনী রণনীতি তৈরি করছে। শুধু বঙ্গ বিজেপির নেতারাই নন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং অমিত শাহের টার্গেট একুশে পরিবর্তন। সেই মতো দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়কে দুধরনের ক্ষমতা দিয়ে ব্যালান্স বজায় রাখার চেষ্টা হচ্ছে। সভাপতি হিসেবে রাজ্য বিজেপির মুখ যেমন দিলীপ ঘোষ অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি করে মুকুল রায়ের গুরুত্ব ইতিমধ্যেই যথেষ্ট বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য নির্বাচনী কমিটির মাথায় মুকুল রায়কে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। ১ অক্টোবর বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার বাড়িতে বঙ্গ বিজেপির বৈঠক হলো। নাড্ডা হয়তো পুজোর পরে আসতে পারেন বাংলায়। কিন্তু বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করতে চান না প্রাক্তন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

একুশের ভোট যুদ্ধে বিজেপির রণরথের সারথী কিন্তু অমিত শাহ। পদ খুইয়ে রাহুল সিনহা কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেও তাঁকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে। অসুস্থ থাকার পরে অমিত শাহ কিছুদিন সক্রিয় ছিলেন না কিন্তু সেরে উঠেই তিনি কলকাতা আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুজোর আগে অমিত শাহ শুধু কলকাতায় আসবেন তা নয়, রাজ্যে কয়েকদিন থাকবেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। উদ্দেশ্য নির্বাচনের আগে সংগঠনকে আঁটসাঁট করা। রাজ্য বিজেপিতে নব্য পুরাতন লড়াই আছে, আছে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বও সেকথা বিলক্ষণ জানেন অমিত শাহ। সবচেয়ে বড়ো কথা তাঁদের লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যে মমতা ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বলেছিলেন “মনে করুন ২৯৪টি আসনেই প্রার্থী আমি”। তার ফলও ফলেছিল। ২১১টি আসনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যে যে উন্নয়ন করেছেন মমতা সেকথা তাঁর পরম শত্রুও স্বীকার করবেন।

অন্যদিকে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে ইতিহাস তৈরি করেছেন মমতা। দল এবং সরকার দুই ক্ষেত্রেই তাঁর ক্যারিশ্মা উল্লেখযোগ্য। এরকম একজন নেত্রীর সঙ্গে লড়াই করতে হবে বিজেপিকে। কাজ সোজা নয় সেকথা তাঁরাও বোঝেন। মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতার বিপক্ষে একটা কোনও নামও বিজেপির কাছে নেই। অবশ্য তাঁদের ব্যাখ্যা নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশের মতো বাংলাতেও নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে চান তাঁরা। মুখে তাঁরা বলছেন জয় সুনিশ্চিত। তাঁদের বক্তব্য জেতার পর তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবেন।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মুকুল রায়কে ২০১১-এর পরিবর্তনের কান্ডারী বলে বিভিন্ন সভায় বলছেন। ২০২১-এ আবার পরিবর্তন আসবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। সেক্ষেত্রেও মুকুল রায়কে রাজ্যে পরিবর্তনের কান্ডারী হিসাবে দেখতে চান তাঁরা। কিন্তু একথা সকলেই মানবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো জনমোহিনী ক্ষমতা রাজ্য বিজেপির কোনও নেতারই নেই। তাই হাল ধরেছেন অমিত শাহ। কখনও নেপথ‍্যে থেকে, কখনও সামনে এসে। দু’দলেই গোষ্ঠী কোন্দল আছে, দু’দলেই নতুন-পুরাতন দ্বন্দ্ব আছে। আর অভিযোগের তীর তো দুদলই একে অপরের দিকে ছুঁড়ছেন। কৃষি বিল সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপি বিরোধীরা একজোট হয়েছেন। রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছে। তার ফলে তৃণমূল কংগ্রেস নাকি বিজেপি ভোট ভাগাভাগি হবে? অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতো কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেস যদি এক হয় তবে বিজেপির স্বপ্ন সফল হবে না। কিন্তু এই অঙ্ক মিলবে কি না তার জবাব মিলবে একুশেই। আপাতত তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি যুযুধান দুই পক্ষই তাদের নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে ব্যস্ত। লক্ষ্য একুশ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*