নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না বিধানসভায়। বৃহস্পতিবার বিরোধীদের সাফ জানিয়ে দিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এমনকি যে ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত লড়াই করছেন, তিনিও জানিয়ে দিলেন- এনআরসি, সিএএ নিয়ে তাঁর আলোচনা করার সময় নেই৷
বৃহস্পতিবার ঘণ্টা দু’য়েকের জন্য অধিবেশন বসেছিল বিধানসভায়৷ পরিষদীয় বিধি অনুসারে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সংরক্ষণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইন রাজ্য বিধানসভায় পাশ করানোর নিয়মরক্ষায় এই স্বল্প সময়ের জন্য এই অধিবেশন বসেছিল৷ কিন্তু এদিন বাম এবং কংগ্রেস প্রস্তাব দিয়েছিল সব দল যৌথভাবে বিধানসভায় বিজনেজ অ্যাডভাইসরি কমিটি বৈঠকে এনআরসি এবং সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনুক।
সম্প্রতি, সিএএ সংসদে পাশ হওয়ার পর এই নাগরিকত্ব বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। তার প্রেক্ষিতে কেরল বিধানসভায় শাসক বামপন্থীদের উদ্যোগে বিরোধী কংগ্রেসের সহযোগিতায় সিএএ প্রত্যাহারের দাবিতে বেসরকারি প্রস্তাব পাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সেই দৃষ্টান্ত তুলে রাজ্যের অ-বিজেপি শিবিরের তরফে কংগ্রেস ও বাম যৌথভাবে পরিষদীয় বিধির ১৮৫ ধারা অনুসারে একটি প্রস্তাবের খসড়া বিধানসভায় জমা দেয় মঙ্গলবার। কিন্তু অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বাম এবং কংগ্রেসের এই বক্তব্যে রাজি হননি। তিনি বলেন বিধানসভায় এখন অন্য কোনো আলোচনার সময় নেই।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে শুরু করলে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী তাঁকে বাধা দেন এবং বলেন আমরা সর্বসম্মত প্রস্তাব আনতে চেয়েছিলাম। আপনারা রাজি হলেন না। তাঁর কথায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আপনারা বন্ধের নামে গুন্ডামি করেছেন। আপনাদের সঙ্গে একসঙ্গে কোন আন্দোলন করা সম্ভব নয়। আমি ১৩ তারিখ দিল্লির বৈঠকেও যাব না। ” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা। উল্লেখ্য, গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় এনআরসি নিয়ে শাসকপক্ষের আনা প্রস্তাবে কংগ্রেস ও বামেরা সায় দেয়।
তবে বুধবারই পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি করেছিলেন যে, তাঁরা আগেই ১৮৫ ধারায় আলোচনার জন্য প্রস্তাবের খসড়া জমা দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, সবার আগে একমাত্র বাংলা এনআরসি’র বিরুদ্ধে সর্বদল প্রস্তাব এনেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই সেই প্রস্তাব এনেছিল সরকারপক্ষ। বিজেপি বাদে শাসক ও বিরোধীরা সেই প্রস্তাব পাশ করেছিল। তারপর থেকেই সিএএ সংসদে পাশ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, এই আইন দেশের সংবিধান বিরোধী। তাই তা প্রত্যাহার করতে হবে। সিএএ’র লক্ষ্য যেহেতু এনআরসি, আর রাজ্য বিধানসভা ইতিমধ্যেই তা নিয়ে প্রস্তাব পাশ করেছে, তাই নতুন করে কংগ্রেস এবং বামেদের আবেদনে সাড়া দেওয়া অর্থহীন।
বিধানসভায় সিএএ-এনআরসি নিয়ে আলোচনা না করতে দেওয়া, দিল্লিতে বিরোধী বৈঠকে যোগ না দেওয়া, দুই ইস্যুতেই তৃণমূল নেত্রীকে একহাত নিয়েছেন সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম তোপ দেগে তিনি বলেন, “কে বিজেপি, আরএসএস-এর সঙ্গে, তা এই থেকে স্পষ্ট।”
Be the first to comment