দেশজুড়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন। তারই মধ্যে চালু হয়ে গেল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। শুক্রবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে, ১০ই ডিসেম্বর ২০২০ থেকে সিএএ কার্যকর হল ভারতে। নয়া আইনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসা অ-মুসলমানরা (হিন্দু, শিখ, পার্সি, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন) ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অনিল মালিকের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯, ধারা ১, উপধারা ২ মেনে ১০, জানুয়ারি ২০২০ থেকে আইন কার্যকর করা হল।’
গত ১১ ডিসেম্বর সংসদে পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। তারপর থেকেই সিএএ ঘিরে উত্তাল দেশ। বিরোধীদের অভিযোগ, নয়া আইন ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি। যা সংবিধানের পরিপন্থী। এটা বিজেপির দেশভাগের ষড়যন্ত্র। সিএএ প্রত্যাহারের দাবিতে পথে নেমে বিক্ষোভ চলছে। আন্দোলনে পড়ুয়ারা। এমনকী মুসলিম মহিলারাও দিল্লি, কলকাতায় রাত জেগে প্রতিবাদ করছেন। বিক্ষোভ ঘিরে ঘটেছে হিংসার ঘটনা। বিজেপি শাসিত আসাম থেকে উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটকে নিহত হয়েছেন মোট ২৬ জন প্রতিবাদী। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশেই মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। বিক্ষোভের আঁচ এতই তীব্র ছিল যে রাজ্য প্রশাসনকে উত্তরপ্রদেশের একাধিক জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। বন্ধ ছিল ইন্টারনেট পরিষেবা। বাংলাতেও প্রতিবাদ ও তা ঘিরে হিংসা লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে পথে নেমে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেরালা, বাংলা ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন সিএএ লাগু করবেন না। কেরালায় এই আইনের বিরুদ্ধে বিধানসভায় শাসক-বিরোধী একযোগে প্রস্তাব পাস করেছে। যা সংবিধান বর্হিভূত কাজ বলে সরব বিজেপি। ইতিমধ্যেই নয়া আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা হয়েছে।
বিক্ষোভের বিরোধীতায় সোচ্চার কেন্দ্র ও গেরুয়া শিবির। প্রবল বিক্ষোভে এনআরসি নিয়ে কিছুটা সুর নরম করলেও দেশে সিএএ লাগু করতে মরিয়া মোদী সরকার। তাদের দাবি, নয়া আইন মানবতার প্রতীক। ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি নয়, উল্টে এতদিন যারা নানা কারণে শরণার্থী ছিলেন তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করে সম্মানিত করা হবে। এই আইন কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। সিএএ কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে না, বরং এই আইনের মাধ্যমে নাগরিকক্ত প্রদান করা হবে। পদ্ম বাহিনীর দাবি, প্রতিবেশী তিন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিপীড়িতদের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, ধরে নেওয়া হচ্ছে মুসলিম প্রধান দেশে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের ওপর ধর্মীয় অত্যাচার হয় না। তাই মুসলমানদের নয়া আইন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অ-মুসলমান শরণার্থীদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে। তবে কেন তারা এদেশে এসেছেন তার উল্লেখ করতে হবে না। মন্ত্রকের এক আধিকারিকের কথায়, ‘ধরেই নেওয়া হবে আবেদনকারীরা সত্যি কথা বলছেন। তারা যে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার তা কোনও আবেদনকারীকেই প্রমাণ করতে হবে না।’ নান বিতর্ক, বিক্ষোভ- তার মাঝেই অবশ্য সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চালু করল মোদী সরকার।
Be the first to comment