এবার নিমতায় অস্ত্র কারখানার হদিশ পেল CID। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার রাতে সেখানে হানা দেয় গোয়েন্দাদের দল। উদ্ধার হয় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র বানানোর মেশিন। ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দু’জনকে ৷
CID সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অস্ত্র কারবারিকে জেরা করে CID-এর গোয়েন্দারা জানতে পারেন, নিমতা এলাকায় তৈরি হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। সেইমতো খবর পেয়ে গভীর রাতে নিমতা শ্রী দুর্গা পল্লিতে হানা দেয় CID-এর একটি বড় দল। সেখানে দুলাল সরকার নিজের বাড়িতেই অস্ত্র কারখানা তৈরি করেছিল। সেই সময় অবশ্য অস্ত্র তৈরির ইঞ্জিনিয়ররা সেখানে ছিলোনা। কিন্তু অস্ত্র কিনতে আসে দমদমের বাসিন্দা প্রকাশ নামে এক দুষ্কৃতী। দুলাল এবং প্রকাশকে গ্রেপ্তার করেছেপুলিশ ৷
গোয়েন্দাদের ধারণা এখানেও কাজ করছিল মুঙ্গেরের অস্ত্র তৈরির ইঞ্জিনিয়ররা। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ইঞ্জিনিয়র কারা? আসলে একটা সময় বিহারের মুঙ্গের ছিল অস্ত্র কারবারের মুক্তাঞ্চল। সেখানে তৈরি দেশি ঘোড়া ছড়িয়ে পড়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকী তা যেত বাংলাদেশেও।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ঢাকায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল মুঙ্গেরি অস্ত্র। হাত কাটা নাসিরুল্লাহ সেই অস্ত্র নানাভাবে ঢুকিয়েছিল বাংলাদেশে। সাধারণ লেদ মেশিনে অসাধারণ এক বেআইনি কারবার চলত মুঙ্গেরে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই সব অস্ত্রের দাম অনেকটাই কম। যারা নিখুঁত দক্ষতায় অস্ত্র বানিয়ে ফেলে তাদের বলা হয় ইঞ্জিনিয়র। অস্ত্র কারবারিদের কোড নেম। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বেআইনিভাবে ভারতে ঢোকা বিদেশি নাইন এমএম পিস্তলের দাম পড়ে যায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সেখানে মুঙ্গের ইঞ্জিনিয়রদের তৈরি নাইন এমএম পিস্তল পাওয়া যায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। স্বাভাবিকভাবেই পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা “ডনের” কাছে কদর রয়েছে মুঙ্গেরের ওই ইঞ্জিনিয়রদের হাতের কাজের।
সম্প্রতি বিহার প্রশাসন কড়া মনোভাব নেওয়ায় ওইসব ইঞ্জিনিয়ররা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে। গোয়েন্দাদের কাছে এসেছে এমনই তথ্য। সেটা প্রথম সামনে আসে কাঁকিনাড় অস্ত্র কারখানার পরদা ফাঁসের পর। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সুকু শেখ নামে মালদার কালিয়াচকের এক জালনোটের কারবারিকে STF পাকড়াও করে। তার সঙ্গেই ধরা পড়ে আমজাদ রায়ান এবং আব্দুল্লাহ নামে মুঙ্গেরের দুই বাসিন্দা। তাদের কাছে উদ্ধার হয় ১ লাখ টাকার জালনোট এবং ৪০ টি সেমি ফিনিসড নাইন এমএম পিস্তল। তাদের জেরা করেই জানা যায় কাঁকিনাড়ার লাড্ডু কারখানার আড়ালে অস্ত্র কারখানার কথা। পরে আগরপাড়া উষুমপুর এবং রাজারহাটে একই কায়দায় অস্ত্র কারখানা গজিয়ে ওঠার খবর মেলে।
গতবছরের ১০ সেপ্টেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় শফিকুল গাজির অস্ত্র কারখানার খোঁজ পায় পুলিশ। সেখানেও অস্ত্র বানাচ্ছিল দু’জন ইঞ্জিনিয়র। তাদের নাম শামসের আলম এবং মহম্মদ ফিরোজ। নিমতায় ইঞ্জিনিয়র কাজ করছিল কি না তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
Be the first to comment