বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ বাঁকুড়ার ইন্দপুরের বাগদিহাতে জঙ্গলমহল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় জঙ্গলমহল কাপ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এরা সরকারি চাকরির সুযোগ পাবে। এছাড়া জঙ্গলমহল কাপে যারা খেলেছেন তারাও সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বিশেষ সুযোগ সুবিধা পাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন খেলাধূলার মধ্যে দিয়ে প্রতিভা উঠে আসবে। এদিন প্রকৃতির মধ্যে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজ বন্যপ্রাণ দিবস। পরিবেশকে ভালোবাসুন, পরিবেশকে ভালো রাখুন। সবুজ বাঁচাও, প্রাণ বাঁচাও। মুখ্যমন্ত্রী সাধারন মানুষের উদ্দেশে বলেন শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখুন, ধ্বংস্ব করতে যাবেন না।
এদিন বাঁকুড়ার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী যা বক্তব্য রাখেন তা সংক্ষিপ্তাকারে দেওয়া হলঃ
বাঁকুড়ায় নেই কোনও মাওবাদী ত্রাসঃ
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বাগদিহার সভামঞ্চ থেকে বলেন একসময় এখানে মাওবাদী ত্রাস ছিল। এখন এখানে কোনও মাওবাদী এলাকা নেই। একসময় এখানকার ছেলেমেয়েদের দিকে মানুষ সন্দেহের চোখে তাকাত। এখন সেই সন্দেহ দূর হয়ে গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, জঙ্গলমহল আজ খুশী। সবাই ভালো থাকুন। পাশাপাশি তিনি অলিচিকি সিলেবাস তৈরীর কথাও বলেন।
হঠাৎ করে টাকা বিলোতে দেখলে রুখে দিনঃ
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন যদি কখনও দেখেন হঠাৎ করে এলাকায় কেউ টাকা বিলোচ্ছে, বুঝবেন কোনও কারন আছে। ধর্মের নামে অনেকে ভেদাভেদ করার চেষ্টা করেন। এসব ক্ষেত্রে লোকাল পুলিশকে জানান। যারা পুলিশকে এসব তথ্য জানাবেন তাদের পুরষ্কার দেওয়া হবে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলে ১০০ ডায়াল করবেন। পুলিশ না শুনলে আমার বাড়িতে গিয়ে কমপ্লেন করে আসবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন কয়েকজন উদ্ভট নেতা হঠাৎ করে টাকা তোলার নামে মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছেন।
আমি জেলাকে ভালোবাসি, তাই নিয়মিত জেলায় আসিঃ
মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমি আগের সরকারের মতো নয় যে জেলায় আসি না। আমি রাজ্যের মতো জেলাকেও ভালোবাসি। তাই বারবার জেলায় ছুটে আসি।
বাঁকুড়া জেলার উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রীঃ
বাগদিহার মঞ্চ থেকে বাঁকুড়ায় যে প্রভূত উন্নয়ন বর্তমান সরকার করেছে সেকথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাঁকুড়ায় ইউনিভার্সিটি করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাটেরও প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। এদিন বেশকিছু প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমরা দলিত পিটিয়ে মারি না, কাউকে জ্বালিয়ে পুড়িয়েও মারি নাঃ
দিল্লির সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন কেন্দ্রের সরকার বড়বড় কথা বলে। আর ওদের কয়েকটা নেতা আছে, তাদেরও বড়বড় কথা। গুজরাটে দলিত ফাংশান দেখতে গেলে তাকে পিটিয়ে মারা হয়, আর বাংলার কোনও দলিত ফাংশান দেখতে গেলে তাদের আদর করে স্থান দেওয়া হয়। আমরা এই সংসারে কাউকে জ্বালিয়ে মারি না, পুড়িয়েও মারি না। সে দলিতই হোক বা সংখ্যালঘুই হোক। আর রাজস্থানে জ্বালিয়ে মেরে দিচ্ছে?
কেন্দ্রের চোখরাঙানি সহ্য করবো নাঃ
মিড ডে মিলের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। ক্ষুব্দ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলার ভাত মেরে লাভ নেই। বাংলার ঘরে ঘরে ভাত তৈরী হয়। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা কৃষকদের খাজনা মুকুব করেছি। জঙ্গলমহলে ৪২ হাজার কনস্টেবলকে চাকরি দিয়েছি। এরপর তিনি বলেন আমাদের রাজ্য আদিবাসী, তপশিলী জাতি-উপজাতি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক কে বাদ দিয়ে কীভাবে চলবে? আমরা সকলে এক পরিবার। এরপর রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা সাদা-কালোর মধ্যে ভাগ করতে পারি না।
ভাগাভাগি করে যারা- তারা দেশকে ভালোবাসেনাঃ
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝরে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। এদিন তিনি বলেন, যারা ভাগাভাগি করে না তারাই দেশকে ভালোবাসে। যারা ভাগাভাগি করে তারা দেশকে ভালোবাসে না।
বিশ্ববাংলাকে যারা সমালোচনা করে তারা মুর্খঃ
কেউ কেউ হিংসা করে বিশ্ববাংলাকে সমালোচনাও করে। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে সমালোচনা করে বলেন, যেখানে জন্ম সেখানকে সম্মান জানাবো না? যেখানে জন্মেছি সেই মাটি আমার সম্মানের ভূমি। আমি আমার জন্মভূমি বাংলাকে ভালোবাসি। বক্তৃতার শেষদিকে স্বামীজিকে উদ্ধৃত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন গীতাপাঠের থেকেও স্বামীজি ফুটবল খেলার কথা বলেছিলেন।
এদিনের সভাতেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন আদিবাসী ভাই বোনেরা আমার গর্ব, তপশিলী ভাই বোনেরাও আমার গর্ব। এদের কোনও তুলনা নেই। সারা দেশ জুড়ে বেকার সমস্যা থাকা সত্বেও ৮১ লক্ষ ছেলেমেয়েকে গত ৬ বছরে কাজ দিয়েছে বর্তমান সরকার। এদিন রাজ্যের বেশ কয়েকজন ক্রীড়াবিদকে মঞ্চে সম্বর্ধনাও দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী এই বলে বক্তৃতা শেষ করেন নিজের কাজ নিজে করুন, এগিয়ে যান, জয় আপনাদের হবেই।
Be the first to comment