দিল্লির নিজামুদ্দিনের যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে ব্যাপক হারে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখানে অংশ নিয়েছিলেন এই রাজ্যেরও বেশ কয়েকজন মানুষ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিজের থেকে জানিয়েছেন বলে এ দিন নবান্নে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘নিজামুদ্দিনে যোগ দেওয়া ৫৪ জনকে মঙ্গলবারই হোম কোয়ারানটিনে পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই ৫৪ জনের মধ্যে ৪০ জন বিদেশি। যাঁরা মায়ানমার, থাইল্যান্ড থেকে এসেছিল।’
তবে, ইতিমধ্যে গোটা ঘটনাটিকে রাজনৈতিক দিকে ঘোরানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিজামুদ্দিনের ঘটনাকে ‘করোনা সন্ত্রাস, সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, পুরো দেশে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা সঙ্গীত সোম। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘এই সংকটের সময়ে জাতপাতের রাজনীতি করবেন না! জাতের নামে বজ্জাতি করবেন না’।
তাঁর কথায়, নিজামুদ্দিনের ঘটনায় আমাদের রাজ্যে ৭১ জন রয়েছে বলে কেন্দ্র জানিয়েছে। এদের ৫৪ জন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তাদের মধ্যে ৪০ জন বিদেশি। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মানুষ। এঁদের কোয়ারানটিনে পাঠানো হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর, বাঁকুড়া, মগরাহাটের কয়েক জনের সন্ধান মিলেছে। আশা করছি তাঁরা নিজেরাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আজ এদের আরও ৩০ জনকে কোয়ারানটিনে পাঠানো হবে। আমরা বলছি আপনারা যোগাযোগ করে কোয়ারানটিনে যান। সুস্থ হয়ে যাবেন।’
তবে, কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, ‘যে সময় নিজামুদ্দিনে ওই অনুষ্ঠান চলছিল, সেই সময় আমাদের চিঠি দিয়ে বলা হয়েছিল, দেশে এমিডেমিকের মতো অবস্থা নেই করোনার জন্য।’ আক্ষেপের সুরে মমতা বলেন, ‘আমরা আগে জানলে ভাল হত। দেরিতে জেনেছি।’
শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার নিজামুদ্দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নবান্ন থেকে বেরিয়ে লালবাজারে গিয়ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পুলিশ কমিশনার-সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকেই নিজামুদ্দিনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়।
ধর্মীয় সংগঠন তাবিলঘি জামাতের হেডকোয়ার্টার দিল্লির নিজামউদ্দিনে। গত ১৩ থেকে ১৫ মার্চ এখানে তাবিলঘি জামাতের একটি ধর্মীয় সমাবেশ হয়। যেখানে সব রকম সামাজিক দূরত্বের বিধি নিষেধ উড়িয়ে একসঙ্গে বাস করছিলেন কয়েকশো মানুষ। এমনকি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, মায়ানমারের মতো দেশ থেকেও অনেকে অংশ নেন।
ইতিমধ্যেই এই সমাবেশে অংশ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে তেলেঙ্গানায় এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে কর্নাটকে। ২৪ জনের শরীরে মিলেছে করোনাভাইরাস। ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া ৪৪১ জনের শরীরে ইতোমধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে করোনার উপসর্গ।
Be the first to comment