দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশে কোভিড ১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে এই নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন দ্বিতীয়বার। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই জোর দিয়ে বলেন, “কোভিড ১৯ অতিমহামারী থেকে প্রত্যেক নাগরিককেই বাঁচাতে হবে।”
পরে মোদী বলেন, লকডাউনের ফলে কোভিড ১৯ এর মোকাবিলায় কিছু সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। রোগ সংক্রমণ একটা পর্যায় অবধি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে বলেন, বিশ্ব জুড়ে করোনা অতিমহামারীর পরিস্থিতি এখনও আদৌ সন্তোষজনক নয়। বিজ্ঞানীরা এমনও বলছেন যে, কোনও কোনও দেশে দ্বিতীয়বার ওই মহামারী ফিরে আসতে পারে। লকডাউন শেষ হওয়ার পরে আমাদের দেশেও যাতে সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়, সেজন্য তিনি নির্দিষ্ট ‘এক্সিট স্ট্র্যাটেজি’ তৈরি করার ওপরে জোর দেন। এই ‘এক্সিট স্ট্র্যাটেজি’ কী হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি রাজ্যগুলির কাছে পরামর্শ চেয়েছেন।
আপাতত কোন কাজগুলি অবশ্যকরণীয়, তার একটা তালিকা তৈরি করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, “আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে পরীক্ষা করা, রোগীকে খুঁজে বার করা, তাঁদের বিচ্ছিন্ন করা ও কোয়ারান্টাইন করার ওপরে।” সেজন্য রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
মোদী মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে আর্জি জানান, কারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের খুঁজে বার করার জন্য জেলা স্তরে অবিলম্বে একজন অফিসার নিয়োগ করা হোক। বিভিন্ন জেলায় যে বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলিকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হোক দ্রুত। সেই তথ্যগুলি দেখলে বোঝা যাবে, অতিমহামারী মোকাবিলায় এর পরে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
কোভিড ১৯ চিকিৎসার জন্য যে সব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সেগুলি সরবরাহ করতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেন মোদী। একইসঙ্গে ওই যন্ত্রপাতি বানাতে যে কাঁচামাল প্রয়োজন, তার সরবরাহও নিশ্চিত করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর কথায়, “প্রত্যেক রাজ্যকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় যে আলাদা হাসপাতালগুলি তৈরি হয়েছে, সেখানে কোনও কিছুর অভাব না হয়। সেখানে যে ডাক্তাররা চিকিৎসা করছেন, তাঁরাও যেন প্রয়োজনীয় সব কিছু পান। আমি আপনাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, ওই রোগের মোকাবিলায় আরও বেশি সংখ্যক ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ দিন।”
দেশে এখন ফসল তোলার মরসুম চলছে। সেকথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, কৃষক ও যে ক্ষেতমজুররা ফসল কাটছেন, তাঁদের লকডাউনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রেও একটা মাত্রায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
চলতি মাসেই বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় মানুষের কাছে অবিলম্বে টাকা ও খাদ্যশস্য পৌঁছে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী চান, কোভিড -১৯ মোকাবিলায় এনসিসি ও ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম থেকে স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করুক রাজ্যগুলি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য নেওয়ার কথাও বলেন। তাঁর কথায় “বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী যথাসম্ভব বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এই সময় আমাদের সকলেরই সাহায্য দরকার।” মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি আয়ুর্বেদের সাহায্য নেওয়ার কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার পরে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু টুইট করে বলেন, “১৫ এপ্রিল লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে। তার পরেও কিন্তু ইচ্ছামতো রাস্তায় ঘোরাফেরা করা যাবে না। আমাদের স্লোয়িং ডাউন করতে হবে।” পরে অবশ্য পেমা খাণ্ডু এই টুইট মুছে দেন।
Be the first to comment