প্রত্যেক দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের যে কোনও উপসর্গ দেখা গেলেই দেরি না করে হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করাতে। শুক্রবার থেকে জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ২০ বছরের এক ছাত্রের। তিনি বরানগরের বাসিন্দা। কিন্তু পুলিশ ও হাসপাতাল কোথাও তিনি সহযোগিতা পাননি। এমনই অভিযোগ উঠে আসছে ফেসবুক পোস্টে। এই মুহূর্তে সেই পোস্ট ভাইরাল।
পোস্টের মাধ্যমেই জানা যাচ্ছে, নিজের এবং পরিবারের উদ্যোগে এলাকার থানায় যোগাযোগ করে হাসপাতালে যেতে চান সেই ছাত্র কোভিড টেস্টের জন্য। সকালে হেল্প লাইনে ফোন করলেও, কেউ ধরেনি। এর পরে গাড়ির ব্যবস্থা করেন। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পৌঁছে যান বেলা ১২ টার মধ্যে।
বেলেঘাটা আইডিতে কী কী উপসর্গ হচ্ছে জেনে নেওয়া হয়। এম আর বাঙুর হাসপাতালে রেফার করা হয় ছাত্রকে। রেফারেন্স লেটারটি লেখার সময়ে নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি জরুরি তথ্যগুলিকে ভয়ানকভাবে বিকৃত করা হয় বলে অভিযোগ। রোগী ও বাড়ির লোক বারবার বলা সত্ত্বেও সঠিক বানান, পিন কোড, বাসস্থানের অঞ্চল লেখা হয় নি। এমনই জানা যাচ্ছে পোস্ট থেকে।
এরপর রোগীর জায়গা হয় আইডির ওপিডিতে। পোস্ট থেকেই জানা যাচ্ছে, আশ পাশেই অজস্র কাশতে, হাঁচতে, শ্বাসকষ্টে হাঁপাতে থাকা রোগী সেখানে ছিলেন। কোনও শারীরিক দূরত্বের অবকাশও রাখা হয় নি বলে অভিযোগ। অধৈর্য্য হয়ে রোগী ও বাড়ির লোক পুলিশকে জিজ্ঞেস করে, কখন বাঙুরে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন তাঁদের চুপ করে অপেক্ষা করতে বলা হয়।
এর পরে একটা অ্যাম্বুলেন্স আসে ঘন্টা দেড়েক বাদে। সেই গাড়ির চালক জানিয়ে দেন আরও একজন রোগী এলে তবেই গাড়ি ছাড়বে। অবশেষে আর এক জন রোগী আসেন এবং সেই গাড়িতেই এম আর বাঙুর পৌঁছন তাঁরা। নিজেরাই ওয়ার্ড খুঁজে বের করেন।
পোস্ট অনুযায়ী, পুরো ওয়ার্ড জুড়ে কেউ শ্বাসকষ্টে ভুগে চলেছেন আর অপেক্ষা করে চলেছেন কখন ডাক্তার আসবেন। এর পরে ডাক্তার আসেন। ছাত্র জানান, “আমায় আইডি থেকে রেফার করা হয়েছে এখানে।” কিন্তু ফেসবুক পোস্টের অভিযোগ অনুযায়ী, ডাক্তার তাঁর যাবতীয় উপসর্গ জানেন এবং তাঁর শরীরের উষ্ণতা মাপা হয়। ডাক্তার বলেন, “কিছুই হয় নি। বাড়িতে থাকো। যে ওষুধ লিখে দিচ্ছি, খাও।” রোগী তখনও শ্বাসকষ্টে হাঁপাচ্ছেন এবং গলায়ও ব্যথা। এমনই অভিযোগ উঠে আসছে সেই পোস্ট থেকে।
কিন্তু সেই ছাত্র ঠিক করেন, টেস্ট করেই তবে বাড়িতে যাবেন। কারণ বাড়িতে মা বাবা ও পরিজনেরা রয়েছেন। অতঃপর অসুস্থ শরীরে হাসপাতালে অনেক ঘোরাঘুরি করে জানতে পারেন, রাজারহাটে চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হসপিটালের দ্বিতীয় চত্ত্বরে টেস্ট হচ্ছে। গাড়িটা নিয়ে এবার রাজারহাট যান তিনি। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যাথা নিয়ে বাবা মা সহ- সিঁথি থেকে বেলেঘাটা আইডি, তারপর এম আর বাঙুর, এবার রাজারহাট।
সেখানে গিয়ে গিয়ে দেখেন খান পাঁচেক লাইন। এক, হাসপাতাল থেকে যাদের হোম কোয়ারেন্টিন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে এখানে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছেন। আবার কোনও সরকারি গাড়ি তাদের বাড়ি পৌঁছে দেবে। আর কোনও উপায় নেই বাড়ি ফেরার। দুই, যারা টেস্ট করতে চান, তাঁরা সকাল থেকে লাইনে। সন্ধ্যে সাতটা অবধিও নাকি ডাক আসেনি। ওখানেই শুয়ে পড়েছেন জ্বর-শ্বাসকষ্টের দরুন৷ তিন, যাদের সরকারিভাবে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে, যেমন করোনায় মৃত মায়ের সন্তান ও পরিবার, এরা অপেক্ষা করছেন, কোথায় আইসোলেশনে রাখা হবে তার ব্যবস্থার। পোস্টের অভিযোগ এই লাইনে সেভাবে শারীরিক দূরত্বও বজায় রাখা হয়নি।
অবশেষে অপেক্ষা করে টেস্ট না করিয়েই বাড়ি ফেরেন সেই ছাত্র। ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধ খাবেন। পোস্টের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে বাড়িতে বাবা ও মা দুজনেই উচ্চরক্তচাপের রুগী। সঙ্গে তাঁর মায়ের আরও বেশ কিছু সমস্যা আছে।
Be the first to comment