পশ্চিমবঙ্গে কমপক্ষে ৯৩১ জন করোনা আক্রান্ত! শুধু কলকাতায় ৪৮৯

Spread the love

বাংলায় এখনও পর্যন্ত কত জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে সেই সংখ্যাটা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে গত মাসাবধি কখনওই স্পষ্ট করে বলা হয়নি। রোজকারের বুলেটিনে শুধু জানানো হয় যে, সেই মুহূর্তে কত জনের শরীরে কোভিড পজিটিভ রয়েছে। রাজ্য ওয়াড়ি মোট আক্রান্তের হিসাব দেওয়া হয় শুধু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিনে।

তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদনকে ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার যে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিবেক কুমার, তাতেই পরিষ্কার যে বাংলায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৩১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ তাঁদের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।

বিবেক কুমারের ওই চিঠিতেই পরিষ্কার যে কলকাতার অবস্থা উদ্বেগজনক। শুধু এই মহানগরীতেই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৮৯ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তার পরই খারাপ অবস্থা হাওড়ার। সেখানে কোভিড আক্রান্তের ১৭৬। এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে যথাক্রমে ১২২ জন ও ৩৪ জন এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

৯৩১ জনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে রাজ্যের ১৫ জেলা থেকে। বিবেক কুমারের চিঠিতে বলা হয়েছে, ৮টি জেলা গ্রিন জোন। সেখানে কত জনের শরীরে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে তা ওই চিঠিতে নেই। তা ছাড়া ওই আটটি জেলার মধ্যে অন্যতম দুই জেলা আলিপুরদুয়ার এবং বীরভূমে গত কাল ও আজ অন্তত সাত জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে বলে খবর।

অর্থাৎ এই সংখ্যাগুলি জুড়লে রাজ্যে প্রকৃত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এই মুহূর্তে ৯৩১ এর বেশি হওয়া উচিত। এবং এই সংখ্যাটা যারপরনাই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, শুক্রবার সকালেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিনে বলা হয়েছিল যে বাংলায় এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯৫ জন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার থেকে অনেকটাই বেশি। ‘কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে এই হিসাবের অস্বচ্ছতা ও ধন্ধ’ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলেই অনেকের মত।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদন সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে গোটা দেশের রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনের তালিকা পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে দশটি জেলা হল রেড জোন। ওই দশ জেলা হল, কলকাতা, হাওড়া, দুই চব্বিশ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও মালদহ। আর অরেঞ্জ জোন হল, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ।

কিন্তু এ হেন শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে আপত্তি তুলেছে নবান্ন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে বিবেক কুমার বলেছেন, যে ভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে তা একেবারে ঠিক না। কেন্দ্র যে গাইডলাইন দিয়েছে সেই অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ১০ টি নয়, কেবল ৪ টি জেলা হল রেড জোন। সেগুলি হল, কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। তাঁর কথায়, কোনও ভাবেই দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পংয়ের মতো জেলাকে রেড জোনে ফেলা যায় না। কারণ, দার্জিলিংয়ে শেষ কারও শরীরে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে ২১ এপ্রিল। জলপাইগুড়িতে ৪ এপ্রিল এবং কালিম্পংয়ে ২ এপ্রিলের পর কোনও কোভিড আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি। তা হলে এই জেলাগুলিকে কীভাবে রেড জোন বলা যায়?

স্বাস্থ্য ভবনের এও দাবি, কেন্দ্রের গাইডলাইন মেনে শ্রেণিবিন্যাস করলে রাজ্যের ১০ টি জেলাকে অরেঞ্জ জোন হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। সেগুলি হল—কালিম্পং (৭), জলপাইগুড়ি (৫), মুর্শিদাবাদ (২), নদিয়া (৮), দার্জিলিং (৬) , পূর্ব বর্ধমান (২), পশ্চিম বর্ধমান (১০), পশ্চিম মেদিনীপুর (১২), মালদহ (২), হুগলি (৩১), দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা (২৫)। ( কোথায় কত জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন তা ব্র্যাকেটের মধ্যে লেখা রয়েছে)

কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, তারা যেন ঠিক ভাবে শ্রেণিবিন্যাস করে। কারণ, ভুলে গেলে চলবে না এই শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতেই সোমবার থেকে গ্রিন জোনে কিছু পরিষেবা, দোকান পাঠ খোলার কথা। সরকারি, বেসরকারি বাসও চলার কথা। কোনও গ্রিন জোনকে অরেঞ্জ জোন বা রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করলে সেখানকার মানুষেরই চাপ বাড়বে।

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকার রাজ্যের দাবি মানবে কিনা সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। বিবেক কুমারের চিঠিতে অন্তত স্পষ্ট হল, রাজ্যের বর্তমান রেড ও অরেঞ্জ জোনগুলিতে এখনও পর্যন্ত কতজন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*