কয়েকদিন আগে থেকেই জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করেছিলেন ভিনরাজ্যে আটকে থাকা আবদুল, মইনিউদ্দিনের মতো শ্রমিকরা। কেন্দ্র বলেছে, তাঁদের নিজের নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। বাকি শুধু সময়ের অপেক্ষা। আনন্দেই ছিলেন তাঁরা সকলে। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরতে পারবেন। পরিবারের সকলের সঙ্গে থাকতে পারবেন। লকডাউনে যেভাবে আধপেটা খেয়ে দিন কাটছে, হয়তো এবার তার অবসান হবে। এই আশাতেই ছিলেন ভিনরাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার।
তবে, চিন্তা যেন কোনওভাবেই পিছু ছাড়ছে না তাঁদের । গতকালই তাঁরা জানতে পেরেছেন, কেন্দ্রের তরফে যে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেই ‘শ্রমিক স্পেশাল’-এ চড়ে বাড়ি যেতে নিজেদের পকেট থেকেই টাকা দিতে হবে । যেখানে, নিজেদের দু’বেলা খাবার জোটাতে হিমশিম হতে হচ্ছে, সেখানে ট্রেনের ভাড়া কীভাবে দেবেন, তা-ই ভেবে কূল পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।
এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন বিরোধীরাও। তাঁদের মতে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত অমানবিক। যাঁরা ভিনরাজ্যে আটকে পড়েছেন, তাঁরা দু’বেলা খেতে পাচ্ছেন না। তাঁরা কোথা থেকে টাকা জোগাড় করে ট্রেনের ভাড়া দেবে ? রেলমন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে একাধিক রাজ্য। রেলমন্ত্রকের এই ভূমিক নিয়ে সরব হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। রাজ্যের শাসক দল বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় সরকারের মনুষ্যত্বহীনতা বলেই মনে করেছে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভানেত্রী দোলা সেন বলেন, “এই সময়ে দাঁড়িয়ে এটা অকল্পনীয় অপরাধ।”
বামপরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এই সিদ্ধান্তকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার মানবিক ভূমিকা নিলে ভালো হত ।” লকডাউনে আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলমন্ত্রক । গতকাল সেই বিষয়ে একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয় । আর এই নির্দেশিকা ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক ।
সেখানে বলা হয়েছে-
১. সংশ্লিষ্ট রাজ্য ট্রেনে কতজন যাত্রী সফর করবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে । শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের ধারণ ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ওই সংখ্যা 1,200-র কাছাকাছি হওয়া উচিত।
২. সংশ্লিষ্ট রাজ্য নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য যাত্রী সংখ্যা যত বলবে, তেমনই টিকিট ছাপাবে রেল এবং তা রাজ্য প্রশাসনকে হস্তান্তরও করা হবে ।
৩. রাজ্য প্রশাসন সেই টিকিট যাত্রীদের হাতে তুলে দেবে। তাঁদের থেকে ভাড়া সংগ্রহ করে পুরো টাকা রেলের হাতে তুলে দেবে।
Be the first to comment