ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে আমফান । যা আপাতত দিঘার দক্ষিণ ও দক্ষিণ- পশ্চিম থেকে ১১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে । আগামী ছ’ঘণ্টায় শক্তিশালী হবে এটি । ১২ ঘণ্টায় অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে । যার জেরে গতকাল থেকেই দিঘায় শুরু হয়েছে মাইকিং । সতর্ক করা হচ্ছে স্থানীয়দের । সতর্ক করা হচ্ছে মৎসজীবীদেরও ।
লকডাউনের জেরে পর্যটকশূন্য দিঘা । বন্ধ সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন দোকানপাট । ফলে এমন সময়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে প্রশাসন । তবুও মৎসজীবী ও স্থানীয়দের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্যই চলছে সতর্কতামূলক প্রচার । ইতিমধ্যে গতকাল NDRF- এর ৩২ জন জওয়ান পৌঁছেছেন দিঘায় । সেইসঙ্গে কাঁথি মহকুমায় ৮ টি ব্লকে ১২ টি গাছ কাটার মেশিন পাঠানো হয়েছে । দিঘার পাশাপাশাশি রামনগর ১ নম্বর ব্লকের সমুদ্র সৈকত এলাকায়ও চলছে মাইকিং ।
ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে, দিঘার দক্ষিণ ও দক্ষিণ- পশ্চিম থেকে ১১০০ কিলোমিটার দূরে ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ- পশ্চিম দিকে ১১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান রয়েছে এটির । ধীরে ধীরে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়া অফিস বলছে, এরপরই সামান্য বাঁক নিয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলবর্তী জেলার দিকে অগ্রসর হবে এটি । যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দিঘা ও সংলগ্ন এলাকা । আজ থেকে বুধবারের মধ্যে এটি অতি শক্তিশালী ঘূ্র্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আগে থেকেই তৈরি জেলা প্রশাসন । আবহাওয়া অফিসের পরামর্শ মেনে মৎস্যজীবীদের সমুদ্র মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে । পাশাপাশি যাঁরা সমুদ্রে চলে গেছেন, তাঁদের ফিরে আসতে বলা হচ্ছে । এক্ষেত্রে যদিও ১৫ জুন পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । তাই সমুদ্রে বড় কোনও ট্রলার নেই । কিন্তু মাঝেমধ্যেই ছোটো নৌকা করে জাল ফেলতে যান বেশকিছু মৎস্যজীবী । তাঁদের উদ্দেশ্যে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে ।
গতকাল রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা দাস মহাপাত্রের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল এলাকায় মানুষজনদের সঙ্গে কথা বলে । তাঁদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন । এই ব্লকে ৮ টি সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে । আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিটি সাইক্লোন সেন্টারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে । এছাড়াও প্রয়োজনে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজনদের যাঁদের বাড়ি একেবারে সমুদ্র তীরে তাঁদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে ব্লক প্রশাসন । সেক্ষেত্রে উপকূলের বিদ্যালয়গুলি যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় তার জন্য ইতিমধ্যে বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে রামনগর ১ ব্লক প্রশাসন । এবং সাইক্লোন সেন্টার ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ত্রাণ শিবির হলে, সেখানে খাওয়া-দাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রস্তুত করার কাজ চলছে । এমনকী ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে শুকনো খাবার মজুত করে রাখা হয়েছে ।
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করার জন্য গতকাল বিকেলে ব্লকের 9 টি অঞ্চলের প্রধানদের নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি । দিঘা, মন্দারমণি উপকূলসহ কাঁথি মহকুমার বাঁকিপুট, খেজুরি এলাকার সমুদ্র উপকূলের দিকেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে । NDRF-এর আধিকারিক অভিষেককুমার গৌরব বলেন , “বুধবার আমফান বাংলায় প্রবেশ করতে পারে । এবং সবথেকে বড় কথা , গত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল যে এসেছিল, তার থেকেও আমফানের গতি বেশি হবে । আমি বলছি, ভয়ের কোনও কারণ নেই । NDRF পুরো প্রস্তুতি নিয়ে এখানে এসেছে ।”
এবিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, “আমফান নিয়ে একটি প্রস্তুতি বৈঠক করা হয়েছে । এবং ঝড়ের মোকাবিলা করতে প্রশাসনিকভাবে সব রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে । জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে নুলিয়া, সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের ও পুলিশকে ।”
Be the first to comment