রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নার্সদের চাকরি ছাড়া নিয়ে এবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘এত নার্স ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমি মুখ্য সচিবকে বলেছি, প্ল্যান করতে। যাতে কাজ চালাতে এলাকার ছেলেমেয়েদের একটা শর্ট টার্ম ট্রেনিং দিয়ে কিছু কাজ করানো যায়। মানে সার্জিক্যাল দিকে নয়, এই একটু স্যালাইনটা দিল, অক্সিজেনটা দিয়ে দিল।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সাহায্য তো আমরাও নিচ্ছি। আমরি, অ্যাপোলো সবার সাহায্য নিচ্ছি। ওঁদের দিকটাও তো দেখতে হবে। এত নার্স চলে গেলে ওঁরা কাজ চালাবে কী করে? ইতোমধ্যে পুরুষ নার্সদের নিয়োগের কথা বলেছি। অবসরপ্রাপ্তরা আবেদন করতে পারেন। তাঁদেরও সুযোগ দেওয়া হবে।’
তিনি জানান, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজকেও অধিগ্রহণ করা হবে। কাল থেকে কেপিসি মেডিক্যালে করোনা চিকিৎসা শুরু হবে। অবসরপ্রাপ্তরা আবেদন করলে নিয়োগের সুযোগ। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে।
গত শনিবার আরও ১৬৯ জন নার্স রাজ্য ছেড়েছেন বলে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে জানিয়েছে পূর্বাঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (এএইচইআই)। সব মিলিয়ে রাজ্য-ছাড়া নার্সের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫৪। এঁরা আদতে মণিপুর, ত্রিপুরা, ওডিশা, ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। আগামী দিনে আরও নার্স একই পথ অনুসরণ করতে পারেন বলে আশঙ্কায় মুখ্যসচিব এবং নার্সিং কাউন্সিলের দ্বারস্থ হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি।
যদিও মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সোশ্যাল মিডিয়া বার্তায় জানিয়েছেন, ‘মণিপুর থেকে নার্সদের ডেকে পাঠানো হয়নি। আমরা গর্বিত আমাদের নার্সরা অন্য জায়গায় গিয়ে ভালো পরিষেবা দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা যদি সেখানে সেফ এবং ওয়েলকাম ফিল না করেন, তা হলে আমরা তাঁদের অন্য রাজ্যে জোর করে থাকতে বলতেও পারি না।’
মে মাসের গোড়া থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফেরার উদ্যোগ শুরু করেছিলেন মণিপুরি নার্সরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বেসরকারি হাসপাতালের স্থানীয় নার্স বলেন, ‘এখানে নার্সরা করোনা-আক্রান্ত হতে শুরু করতেই ওঁরা ভয় পেয়েছিলেন। ওঁদের রাজ্যে সে রকম করোনা কেস নেই। তাই অনেককেই ফেরার জন্য বাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।’ তবে ওডিশা, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যের নার্সরা কেন বাড়ি ফিরছেন, সে নিয়ে এখনও ধন্দে বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা।
তাঁদের আশঙ্কা, মে মাসের শেষে এবং লকডাউন প্রত্যাহার হওয়ার পর নিজের রাজ্যে ফেরা নার্সের সংখ্যাটা আরও বাড়বে। যার ফলে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা এএইচইআই-এর।
Be the first to comment