রাজ্যে একদিনে করোনায় আক্রান্ত ৩৪৪, মৃত আরও ৬

Spread the love

গত রবিবার পশ্চিমবঙ্গে নতুন ২০৮ জনের শরীরে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল, যা এযাবৎ একদিনে সর্বাধিক ছিল। আজ, বৃহস্পতিবার ভেঙে গেল সমস্ত রেকর্ড। স্বাস্থ্য ভবনের বুলেটিন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ রাজ্যে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৪ জন! এর আগে বাংলায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এত করোনা পজিটিভ রোগী একদিনে পাওয়া যায়নি। বুলেটিন বলছে, এই আচমকা বৃদ্ধির পরে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেল সাড়ে চার হাজার।

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মারা গেছেন আরও ৬ জন। ফলে কোভিডে মোট মৃতের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়াল ২২৩। আরও ৭২ জন শরীরে করোনা সংক্রমণ থাকা অবস্থায় মারা গেছেন কো-মর্বিডিটির কারণে। ফলে করোনা নিয়ে মোট মৃত্যু এ রাজ্যে ঘটেছে ২৯৫ জনের। পাশাপাশি, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯০ জন সুস্থও হয়ে উঠেছেন। ফলে মোট কোভিডজয়ীর সংখ্যাও এ রাজ্যে ১৬৬৮। সবমিলিয়ে ডিসচার্জ রেট ৩৭.৬০ শতাংশ। এই মুহূর্তে করোনা অ্যাকটিভ আছে ২৫৭৩ জনের দেহে।

এ দিন ৯২৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার মতে, বেশি সংখ্যায় টেস্ট হয়েছে বলে আরও বেশি কোভিড পজিটিভ রোগীর সন্ধান মিলেছে ঠিকই, কিন্তু জেলাভিত্তিক বৃদ্ধির সূচকে নজর রাখলেই স্পষ্ট হয়, গত কয়েক দিনে যে বিভিন্ন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা বাংলায় ফিরছেন, তাঁদের অনেকের মধ্যে উপসর্গ থাকার কারণেই কোভিড পজিটিভের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেল এতটা।

দিনের বুলেটিন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮৭ জনই কলকাতার। তার পরেই আছে হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনা, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫ ও ৪৯। কিন্তু উদ্বেগের পারদ একলাফে অনেকটা বাড়িয়েছে উত্তর দিনাজপুর। বুলেটিন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ধরা পড়েছেন ৪৬ জন! সপ্তাহ খানেক আগেও এই জেলা ছিল করোনাশূন্য গ্রিন জ়োন। দিন কয়েকের মধ্যেই হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা, যার মধ্যে একটা বড় অংশই ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিক। এর ফলে এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩।

বীরভূমেও এক দিনে ২৭ জন আক্রান্ত হওয়াকেও আর মোটেও হাল্কা চোখে দেখা যাচ্ছে না। এ সংখ্যাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এর পরেই রয়েছে পূর্ব বর্ধমান ও নদিয়া। যেখানে আক্রান্ত ১৬ জন ও ১৫ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১০ জন ও মালদার ৯ জন গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রামিত বলে জানা গেছে। মৃতদের মধ্যে ৩ জন কলকাতার, ২ জন হুগলি ও ১ জন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা বলে প্রকাশিত বুলেটিনে।

রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পরিসংখ্যান দেখে উদ্বেগের পারদ হু হু করে চড়লেও, ভিন্ রাজ্য থেকে শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করলেই যে রাজ্যে করোনার সংক্রমণ ছড়াবে অনেক বেশি, সে আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। প্রথম দিকে বহু জেলায় শোনা গেছিল, অন্য রাজ্য থেকে ফেরার পরে তাঁদের গ্রামে বা এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু প্রশাসন বলছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহায়তাও মানবিক ভাবে বিচার করতে হবে। তাঁরা ভিন রাজ্যে যেভাবে ছিলেন লকডাউনের পর থেকে, তাতে তাঁদের বাড়ি ফেরানোরই কথা।

বৃহস্পতিবারের বুলেটিন আরও বলেছে, রাজ্যে মোট টেস্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার, ৭৬৯। প্রতি ১০ লক্ষ মানুষে টেস্ট হয়েছে ১৯৫৩ জনের। এই সংখ্যাটা বেশ সন্তোষজনক বলেই মনে করছেন অনেকে। মোট ৩৮টি ল্যাবরেটরিতে টেস্ট হচ্ছে করোনার। ৬৯টি হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা। ৯২০টি আইসিইউ বেড রয়েছে, ভেন্টিলেটর রয়েছে ৩৯২টি। রাজ্যের মোট ৫৮২টি সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে আছেন ১৭ হাজার ৪২১ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ লক্ষ ৯ হাজার ৫৫৭ জন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*