দীর্ঘদিনের লকডাউন থেকে আপাতত আনলকে ফিরেছে দেশ। খুলেছে অফিস-কাছারি, দোকানপাট, মন্দির-মসজিদ-সহ ধর্মীয় স্থান, রেস্তোরাঁ, শপিং মল। আপাতত করোনাকে সঙ্গী করেই জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার দিকে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও করোনার আক্রান্তের সংখ্যায় কিছুতেই লাগাম পরানো যাচ্ছে না। বরং প্রতিদিন রেকর্ড গড়ছে ভাইরাসের দাপট। বিশ্বের মধ্যেও আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে একদম প্রথম সারিতে চলে এসেছে ভারতবর্ষ। এই পরিস্থিতিতে ফের সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
জানা গিয়েছে, আগামী ১৬ ও ১৭ জুন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৭ তারিখের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছচ্ছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ফের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও লকডাউনের মাঝে বারবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মোদী।
গোটা দেশেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রামিতের সংখ্যা। কেন্দ্রের উপদেষ্টা তথা নয়াদিল্লি এইমসের অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া ক’দিন আগেই বলেছিলেন, আগামী ২-৩ মাসে সংক্রমণ শিখরে পৌঁছতে পারে। গুলেরিয়ার কথার সূত্র ধরেই দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী দু’দিন আগে দাবি করেছেন, ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস বোঝা যাচ্ছে না। অর্থাৎ, গোষ্ঠী সংক্রমণের সব রকম নিদর্শন মজুত, কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা আইসিএমআরের অধিকর্তা বলরাম ভার্গব বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ভারতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি।
ভারতের শীর্ষ মেডিক্যাল গবেষণা সংস্থার বক্তব্য, তারা করোনা সংক্রমণের পরিধি বুঝতে কনটেইনমেন্ট এবং নন-কনটেইনমেন্ট—দু’ধরনের জোনেই সেরো সার্ভে চালিয়েছিল। আর তার রিপোর্টই বলছে, ভারতে নন-কনটেনমেন্ট জোনে সংক্রমণের হার মাত্র ০.৭৩ শতাংশ! শহরের বস্তি এলাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি গ্রামাঞ্চলের বস্তির থেকে ১.৮৯ গুণ বেশি আর সাধারণভাবে শহরাঞ্চলে সংক্রমণের ঝুঁকি গ্রামের চেয়ে ১.০৯ গুণ বেশি।
প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় সংক্রামিত ও মৃতের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই কম। করোনায় মৃত্যুর হার মাত্র ০.০৮ শতাংশ। আইসিএমআর অধিকর্তার মতে, এতেই স্পষ্ট, ভারতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি। কিন্তু সংক্রমণের হার এতটা কম মানে, বিপুল জনসমষ্টি এখনও সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি।
তবে, আইসিএমআর যাই দাবি করুক না কেন, কর্নাটকের মতো রাজ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্য থেকে এখনও কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রাজস্থানের সীমান্ত সিল করেছে সেই রাজ্যের সরকারও। পরিযায়ীদের এত পরে, এভাবে বাড়ি পাঠানোর জন্যে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ধীরেধীরে সম্পূর্ণ আনলকের পথে হাঁটতে হবে গোটা দেশকেই। সেই পরিস্থিতিতে কীভাবে সংক্রমণে বাঁধ দেওয়া যাবে, তা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
Be the first to comment