লাদাখে ভারতী ভূখণ্ডের দিকে যারা নজর দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে, তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারত। রবিবার মন কি বাতে ভারত ও চিনের মধ্যে চলা সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে এ কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লাদাখে শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি চিনকে তাদের কৃতকর্মের জন্য মানুষের অর্থনৈতিক ধাক্কা দেওয়ারও সাধুবাদ দেন তিনি। আত্মনির্ভর ভারত চিনা দ্রব্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান নমো।
রবিবার মাসিক রেডিয়ো বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডের দিকে তাকানোর সাহস দেখিয়েছে, তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে বন্ধুত্ব রাখতে হয়, সেটা যেমন ভারত জানে, তেমনই কী ভাবে কারও সঙ্গে যুঝতে হয় এবং জবাব দিতে হয়, সেটাও দেশের জানা রয়েছে। কাওকে ভারত মাতার সম্মান খর্ব করার অনুমতি যে দেওয়া হবে না, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন আমাদের সাহসী জওয়ানরা।’
সেনাবাহিনীর দাবি, ১৫ জুন মাঝরাতের সংঘর্ষে হতাহত হয়েছেন চিনের ৪৫ জন। লড়াইয়ে চিনের কর্নেলেরও মৃত্যু হয়েছে, এই খবরটাও চিনা বাহিনী ভারতকে জানাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতি হল, হাতাহাতি বা গোলাগুলি নেই, কিন্তু পূর্ব লাদাখে অতন্দ্র প্রহরায় দু’দেশের সেনা। পরস্পরের উপর নজর রেখে চলেছে তারা, যে যার অবস্থানে অনড়। ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা ডেরার উপস্থিতি ভারত সরকারিভাবে স্বীকার বা অস্বীকার, কোনওটাই করেনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীও মুখে কুলুপ। ঠিক তার মধ্যেই সামনে এলো ২৬ জুনের উপগ্রহ চিত্র, যাতে ১৬টি চিনা শিবিরের উপস্থিতি স্পষ্ট। গলওয়ানের ওয়াই নালার কাছে চিন সেনাছাউনি গড়ে প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-তে ভারতীয় সেনার টহলদারিতে বাধার সৃষ্টি করছে, এ খবর আগেই মিলেছিল।
শুক্রবারের উপগ্রহ চিত্র তারই হাতে গরম প্রমাণ মিলল। ৯ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে রয়েছে শিবিরগুলি৷ তার মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার এপারে, ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে কালো ত্রিপলে ঢাকা গোটা দশেক সেনাছাউনি দেখা গিয়েছে৷ সূত্রের খবর, ওই কালো ছাউনিগুলোই ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা চিনা সেনার ডেরা!
গলওয়ান ও শায়ক নদীর মোহনার বাঁকে গড়ে ওঠা এই চিনা ঘাঁটি থেকে ভারতের প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-এর দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার, ফলে এখানে বসে ভারতীয় সেনার গতিবিধির উপর নজর রাখা সহজ। আবার উত্তর লাদাখে ভারত যে দুরবুক-দৌলত বেগ ওল্ডি হাইওয়ে বানাচ্ছে, তার দূরত্ব এই কালো ছাউনি থেকে মেরেকেটে ৬ কিলোমিটার। ভারতের এই রাস্তা তৈরি নিয়েই চিনের আপত্তি।
পূর্ব লাদাখের পরিস্থিতি জটিল বুঝেই বিকল্পের খোঁজও চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ‘এরিয়া অপারেশন’-এর মাধ্যমে ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা চিনা সেনাকে সরানো সম্ভব কি না, খতিয়ে দেখছে সরকার। সূত্রের খবর, যাবতীয় পথ খতিয়ে দেখতে দু-এক দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বসবে নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠক৷
এ দিন মন কি বাতে নমো করোনা প্রসঙ্গও আনেন। বলেন, ‘ভারত সবসময় তার সমস্যাগুলিকে সুযোগে রূপান্তরিত করেছে। এ কথা মাথায় রেখে আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে যেতে হবে। যদি ১৩০ কোটি ভারতীয় এই ভাবনা নিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যান, তাহলে এই বছরটা কৃতিত্ব বা প্রাপ্তির বছরে রূপান্তরিত হবে। দেশ নতুন লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে। নতুন পদক্ষেপ করতা পারবে এবং নয়া উচ্চতায় পৌঁছতে পারবে।’
Be the first to comment