বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে গতকাল ভার্চুয়াল বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন । কিন্তু অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন না । তা নিয়ে ফের বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বললেন, শিক্ষাব্যবস্থা রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত । রাজনীতির ফাঁস ক্রমেই শিক্ষাব্যবস্থার উপর চেপে বসছে।
রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এই প্রথমবার নয়, আগেও একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যপাল । কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী পরিকাঠামো নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি বলেন, “রাজ্যের শিক্ষায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। শিক্ষাব্যবস্থা রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত। কলেজের ভর্তির ক্ষেত্রে চলে আর্থিক দুর্নীতি । শিক্ষায় আর্থিক শোষণ অপরাধের সমান।”
রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জগদীপ ধনকড়। রাজ্যের শিক্ষার মান পড়েছে বলে অভিযোগ করেন। এমনকী প্রাক্তন উপাচার্যরাও তাঁর সঙ্গে একমত বলে তিনি জানান। বলেন, “সঠিক শিক্ষা পেলে দেশ এগোবে । শিক্ষায় অবহেলা আঘাত করে পরবর্তী প্রজন্মকে । রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থার মান নামছে । গত দুই বছর ধরে বাংলায় এই পরিস্থিতি চলছে । রাজ্য শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্ব দিচ্ছে না । “
কোরোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ করতে পারত সেই উল্লেখও করেন রাজ্যপাল । কিন্তু রাজ্য সেই সব কিছুই করেনি বলে তাঁর অভিযোগ । এই লকডাউনে অনলাইন লাইব্রেরির মতো সুবিধা শুরু করা যেত বলে মনে করেন তিনি । তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যপালের সঙ্গে লড়াই করছে এই রাজ্য। শিক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে না । আপনারা তো ভারতকে পালটে দিচ্ছেন । “
ভার্চুয়াল বৈঠকে অধিকাংশ উপাচার্য অনুপস্থিত থাকায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন তিনি । একের পর এক টুইটও করেছিলেন । রাজ্যপালের ডাকা ভার্চুয়াল বৈঠকে অধিকাংশ উপাচার্যের অনুপস্থিতিকে “দুর্ভাগ্যজনক” আখ্যা দিয়ে টুইটারে তিনি লেখেন,”ভার্চুয়াল কনফারেন্সে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যের থেকে অনেক কিছু জানার সুযোগ হল । দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্য উপাচার্যরা ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থের কথা ভাবলেন না । তাঁরা বৈঠকে থাকেননি ।”
এদিকে আজ সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে মাধ্যমিক ও CBSE দশম শ্রেণির সকল পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান । এমনকী যাদের ফল আশানরূপ হয়নি, তাদের কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি । বলেন, “অনেকের ফল আশানরূপ হয়নি । যাঁদের ফল আশানরূপ হয়নি, তাঁরাও হতাশ হবেন না । “
তবে ট্যুইট করে রাজ্যপালকে দেওয়া ভার্চুয়াল কনফারেন্স নিয়ে চিঠির উত্তর প্রকাশ করা হয় উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে। চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, রাজ্যপালকে উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনায় যেতে গেলে বিধিমোতাবেক উচ্চ শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা বা পরামর্শ করেই যেতে হবে। রাজ্যপাল যদি তা না করেন তাহলে তা আইন লঙ্ঘিত হবে।
চিঠিতে উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে জারি করা বিধির প্রসঙ্গ তুলে আরও বলা হয়, “আচার্য কে যা যোগাযোগ উপাচার্যদের সঙ্গে করতে হবে তা উচ্চ শিক্ষা দফতর মারফত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে আচার্যের কোন সচিবালয় থাকবে না। আচার্যের অফিস থেকেও ছাত্রদের কোনো অভিযোগ আসেনি উচ্চ শিক্ষা দফতরের কাছে। আইন অনুযায়ী আচার্যের কাছে যদি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ এসে থাকে তাহলে সেটি তদন্ত বা কারণ খোঁজার জন্য উচ্চশিক্ষা দফতর পাঠাতে হবে সে ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা দফতর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”
ভার্চুয়াল কনফারেন্স করার আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে চিঠি পাঠান। মুখ্যমন্ত্রী ও সেই চিঠিতে ভার্চুয়াল কনফারেন্স নিয়ে কার্যত তার অবস্থান স্পষ্ট করে দেন রাজ্যপালকে। তবে রাজ্যপালের ট্যুইটের প্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষা দফতরের পাল্টা চিঠি কার্যত এই সংঘাতকে আরও বাড়াল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Be the first to comment