এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ঘিরে রবিবার উত্তাল হয়ে উঠেছিল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া। পুলিশ ও জনতার খণ্ড যুদ্ধে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় চোপড়ার কালাগছ এলাকা। জনতার রোষে দাউ দাউ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পুলিশের একাধিক গাড়ি ও সরকারি বাস। টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশের বিশাল র্যাফ ও কমব্যাট বাহিনী। ইসলামপুরের পুলিশ সুপার সচিন মক্করের নেতৃত্বে রাতেই চলে অভিযোগ। অশান্তির ঘটনায় ইতোমধ্যে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
তবে, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, দশম শ্রেণির ওই কিশোরীকে গণধর্ষণের পর খুনের অভিযোগ উঠলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কিন্তু ধর্ষণের কোনও প্রমাণই মেলেনি। ময়নাতদন্ত অনুসারে, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরীর। তবে, ওই কিশোরীকে কেউ জোর করে বিষ খাইয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদিও বিজেপি এখনও সেই দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই দেহ সৎকার করে দিতে চাইছিল পুলিশ।
তবে, এদিন সকাল থেকেই গোটা থমথমে গোটা চোপড়া এলাকা। যদিও বিজেপি যে বিষয়টি ছেড়ে দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট হয়েছে গেরুয়া শিবিরের পদক্ষেপেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে চোপড়াকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ জানাতে এদিনই যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী ও দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু সিং বিস্ত।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার সকালে চোপড়া থানার সোনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চতুরাগছে এক কিশোরীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামবাসীদের মধ্যে। অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে প্রথমে চোপড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এরপর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চোপড়ার কালাগছ এলাকা। ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ধর্ষণকারী ও খুনীকে গ্রেফতারের দাবিতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় লোকজন। হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নামেন পুরুষ ও মহিলারা। সেই বিক্ষোভে সামিল হয় বিজেপিও। এমনকী ওই কিশোরী বিজেপি নেতার বোন বলেও দাবি করা হয়।
দীর্ঘক্ষণ টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক বন্ধ রেখেই চলতে থাকে বিক্ষোভ। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। মুহূর্তে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে জাতীয় সড়ক। মারমুখী জনতার ভয়ে একসময় বিশাল পুলিশ বাহিনীকে পিছু হঠতে দেখা যায়। গুলির শব্দও শোনা যায়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় তিনটি সরকারি বাস ও তিনটি পুলিশের গাড়িতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় পুলিশ। টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটিয়ে ছত্রভঙ্গ করা হয় মারমুখী জনতাকে। এরপর শান্ত হয় এলাকা।
বিষয়টিকে নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ইস্যু করে জোরদার আন্দোলনে নেমেছে বিজেপি। বিজেপির অভিযোগ, অভিযুক্ত ধর্ষণকারী তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ি অভিযোগ করেন, ‘তৃণমূলের শাসনকালে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই রাজবংশী সম্প্রদায়ের উপর চরম অত্যাচার শুরু হয়েছে। চোপড়ায় আমাদের সমর্থক পরিবারের এক নাবালিকা মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার পর তাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।’
তবে চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। মেয়ে এবং ছেলেটি একই ক্লাসে পড়াশোনা করত। একই জায়গায় প্রাইভেট টিউশনিতেও যেত। ওদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। শুনলাম, গতকাল রাতে মেয়েটিই ছেলেটিকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসে। আজ সকালে মেয়েটির দেহ পাওয়া গেলেও ছেলেটি এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ। মেয়েটির পরিবার তৃণমূলের সমর্থক। বিজেপি এই ঘটনায় রঙ চড়িয়ে ও উস্কানি দিয়ে গোলমাল বাঁধানোর চেষ্টা করছে। পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় সে চেষ্টা সফল হয়নি। আমরা চাই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে আসল সত্য প্রকাশ করুক পুলিশ।’
তবে, এদিন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসতেই বিজেপির দাবি কিন্তু ধোপে টিকছে না। যদিও চোপড়া কাণ্ড নিয়ে রাজনীতি অব্যাহত রাখছে গেরুয়া শিবির।
Be the first to comment