দিল্লি পুলিশ অঘোষিত জরুরি অবস্থা চালাচ্ছে

Spread the love

দেবাশিস ভট্টাচার্য

সি.এ.এ, এনআরসির বিরুদ্ধে শাহীনবাগে মহিলাদের ঐতিহাসিক অবস্থান আন্দোলনের কথা আশা করি কেউ ভোলেননি। সেই আন্দোলন তোলার জন্য বিজেপির দিল্লির নেতা কপিল মিশ্র হুমকি দিয়েছিলেন। করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর কিছুদিন আগেই দিল্লি ছাত্রাবাস থেকে শুরু হয়েছিল সংখ্যালঘুদের নিধনযজ্ঞ। বিজেপি দিল্লি নেতাদের উস্কানিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয় এর ফলেই ৫৩ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ৪০ জনই সংখ্যালঘু। সেই ঘটনা ঘটনার পিছনে আগুনে ঘি ঢেলেছিল বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের প্ররোচনামূলক ভাষণ। কিন্তু দিল্লির পুলিশ সেই বিজেপি নেতা কে প্ররোচনা সৃষ্টির দায়ে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করেন নি। তারা প্রথমে গ্রেফতার করল জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে, এবং জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে। এই ৩ জন ছাত্রীই ক্যা এবং এনআরসি বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। শাহীনবাগে এরা রোজ যেতেন এটা ঠিক কথা। সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সাংবিধানিক অধিকার। দেশবাসীর আছে, ওই তিন ছাত্রীরও আছে। তারা তাই প্রয়োগ করেছিলেন। সেজন্য দিল্লির পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারের পর যে সাম্প্রদায়িক হানাহানি ঘটনা ঘটে তাতে এদের জড়িয়ে এদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়।

এই অবধি চলছিল তারপর হঠাৎ দেখা গেল শনিবার ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২০ দিল্লি পুলিশ সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, স্বরাজ ইন্ডিয়া আন্দোলনের নেতা যোগেন্দ্র যাদব, জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জয়তী ঘোষ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ এবং একজন তথ্যচিত্র নির্মাণকারী রাহুল রায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিটে নাম তোলেন। তাতে সারা দেশবাসী অবাক হন কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নেই দিল্লি পুলিশ চলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কথায়। এটা ঠিক যে ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তাঁরা ওই সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে মদত দেয়নি বটে তবে ক্যা আর এনআরসির বিরুদ্ধে তাঁরা মত দিয়েছিলেন এবং তারা শাহীনবাগ আন্দোলনে সমর্থনেও ছিলেন তাই জন্য তাঁদেরকে শিক্ষাবিদ এই ওই ছাত্রীর পর এদেরকে গ্রেফতার করা হলো।

এঁরা নামি অধ্যাপক, অধ্যাপিকা বলে প্রশ্ন নয় প্রশ্ন হচ্ছে যে কান্ডের সাথে যে যুক্ত নয় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপি প্রতিবাদকারীর কণ্ঠ স্তব্ধ করতে চাইছে। তাদের ভয় দেখাতে চাইছে। এটা এমনি এমনি হয়নি এটার পিছনে একটা উদ্দেশ্য কাজ করেছে। অর্থনৈতিকভাবে যখন দেশের অবস্থা খুবই খারাপ সেই খারাপ অবস্থার মধ্যেই মোদি সরকার যখন দেশের রেল, ব্যাঙ্ক সহ সবকিছু তাদের পছন্দসই দু’চারজন শিল্পপতি হাতে তুলে দিতে চাইছেন তার বিরুদ্ধেও দেশবাসী গর্জে উঠছেন। এদের সবাইকেই সন্তুষ্ট করার জন্য এই অস্ত্র প্রয়োগ করলো দিল্লি পুলিশ। এবার হাতে আছে এনআইএ। যেসব জায়গায় সরকার ক্ষমতায় আছে সেখানে পুলিশ দিয়ে আর যেখানে নেই সেখানে এনআইএ দিয়ে মিথ্যা মামলা করছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা এনআইএকে ব্যবহার করছে। জরুরি অবস্থার সময় দিল্লিতে পুলিশ যা করত, যেভাবে গরিব মানুষের বস্তি ভেঙে ছিল, যেভাবে মানুষকে কারাবন্দি করত সেই ঘটনাগুলোই এখন দিল্লিতে অমিত শাহর পুলিশ করছে -শুধু জরুরি অবস্থা ঘোষণা না করেই।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*