কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ কবে শুরু হবে? জানালেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়

Spread the love

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তরফে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিনক্ষণ জানিয়ে প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে গাইডলাইন। সেখানে ১ নভেম্বর থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, নভেম্বরে রাজ্যে একের পর এক পুজো ও অন্যান্য পরব রয়েছে। তাই ডিসেম্বরের আগে নতুন শিক্ষাবর্ষ চালু সম্ভব নয়। রবিবার রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমনই জানালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ডিসেম্বর মাসেই শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রস্তাব পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানানো হবে।

সম্প্রতি গাইডলাইন জারি করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ চালুর দিন ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। সেই গাইডলাইনে ১ নভেম্বর থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ চালুর কথা বলা হয়েছে। UGC-র দেওয়া অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে। ১ নভেম্বর থেকে সেমেস্টার ও বর্ষের নতুন ব্যাচের ক্লাস চালু করতে হবে। কোরোনা আবহে পঠন-পাঠনের ব্যাপক ক্ষতির কথা মাথায় রেখে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ছুটিতে কাটছাঁট ও সপ্তাহে ছয়দিন করে ক্লাস করানোর কথাও বলা হয়েছে গাইডলাইনে।

তবে, COVID-১৯ প্রতিরোধের জন্য সমস্ত রকম গাইডলাইন, নির্দেশিকা, পরামর্শ মেনেই অ্যাকাডেমিক কার্যকলাপ চালু করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। ১ নভেম্বর থেকে নতুন পড়ুয়াদের ক্লাস শুরু করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গাইডলাইনের পর আজ রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এদিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নভেম্বরে পুজো ও পরবের মরশুম। তাই ডিসেম্বরের আগে রাজ্যে শিক্ষাবর্ষ চালু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের আগে অ্যাকাডেমিক সেশন চালু করাটা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্ত বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানাব। ভাইফোঁটা ১৬-১৭ নভেম্বর পড়ে যাচ্ছে। তারপর আমাদের মুসলিম সমাজের একটি পরব আছে, ছটপুজো আছে, জগদ্ধাত্রী পুজো আছে, সব একদিন একদিন করে হতে পারে। তাহলে এগুলিকে কাটিয়ে যদি করি, চার-পাঁচ দিন আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার কাজ করি, তাহলে অনলাইন-অফলাইন যেটা বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করবে তাতে অ্যাকাডেমিক সেশনটা চালু হতে পারে। ফিজিক্যাল অ্যাটেন্ডেন্সটা কী হবে, কীভাবে খুলবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রাজ্য সরকারের নির্দেশাবলীর উপর কিন্তু, শিক্ষাবর্ষ স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের, তা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করা সম্ভব বলে তাঁরা মনে করেন। আমরা সেটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাব।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, ডিসেম্বরে শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে লিখিতভাবে জানানো হবে। তিনি বলেন, আমরা শুধু শিক্ষাবর্ষ শুরু নিয়ে আলোচনা করেছি আজ। নভেম্বর মাসটা পুরোই পুজো ও পরবের মাস। সবদিক বিবেচনা করে এবং দেখে আমাদের মনে হয়েছে ডিসেম্বরের আগে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার সম্ভাবনা কম। ছুটি কমিয়ে দিই বাড়িয়ে দিই, যাই করি, আমি তো আর পুজোটাকে কমিয়ে দিতে পারব না। আমি তো বলতে পারি না কালিপুজো হবে না। দীপাবলি হবে না, দশেরা হবে না, ভাইফোঁটা হবে না, ছটপুজো হবে না। এগুলো সেকশন যেগুলো আছে থাকবে। আমি বারবার বলছি শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরের আগে হওয়ার সম্ভাবনা কম। মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদন দিলে আমরা তা UGC-কে লিখিতভাবে জানাব।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, আমাদের কাছে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ যেমন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, শিক্ষাবর্ষটা শুরু করাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে ফিজিক্যাল অ্যাটেনডেন্সের কোনও সম্পর্ক নেই। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তাঁরা ইতিমধ্যেই অনলাইনে শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন। অফলাইনেও যাতে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্যেও তাঁরা বিশেষভাবে ব্যবস্থা নেবেন। অ্যাকশন প্ল্যানও তাঁদের করতে বলা হয়েছে। এটাই আজকের ভার্চুয়াল বৈঠকের নির্যাস।

তবে, নভেম্বরে রাজ্যে উৎসবের মরশুম। উৎসবকে উপেক্ষা করে ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষাবর্ষ শুরুর নির্দেশ নিয়েও এদিন খোঁচা দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, শিক্ষাবর্ষটা নভেম্বরে শুরু করা হলে, নভেম্বরে প্রচুর উৎসব আমাদের। হয়তো উত্তর ভারতে সেটা নেই। কিন্তু, আমাদের এই রাজ্যে পুজো একটা বিরাট জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। সেই পুজোর দিকটাকে খেয়াল রাখতে হবে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, জীবাণুমুক্ত করতে হবে, এগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল কীভাবে খোলা যায়, কোন পদ্ধতিতে খোলা যায় তার আলাপ-আলোচনা চলছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্যানিটাইজ না করে ফিজিক্যাল অ্যাটেন্ডেনটা বোধহয় এই মুহূর্তে সরকারের অনুমোদন না থাকলে কোথাও করা সম্ভব হবে না। ডিসেম্বরের আগে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়াটা খুব কঠিন এবং বিবেচনার বিষয়।

যদিও, এদিন উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক শেষে সূত্র মারফত জানা গেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গাইডলাইনকে মেনে ২ নভেম্বর থেকে কলেজে স্নাতকের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা তার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন। অনলাইন না অফলাইন মাধ্যমে হবে তার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে, অক্টোবর মাসে স্নাতকের চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা ও ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ফলপ্রকাশ করা হবে। সেক্ষেত্রে ফল প্রকাশের পর স্নাতকোত্তরের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে। তাই স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের শুরুতে ক্লাস শুরুর করা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে। কিন্তু, তারপরেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, ডিসেম্বরের আগে শিক্ষাবর্ষ শুরু সম্ভব নয়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*