নবান্ন বন্ধ থাকবে। কিন্তু বিজেপির ‘নবান্ন অভিযান’ হবে। সুনসান নবান্নের দিকেই কলকাতা এবং হাওড়া থেকে বিজেপির চারটি মিছিল এগিয়ে যাবে আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটা থেকে।
দলের যুব মোর্চার এই কর্মসূচি নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক ধরে সাজো সাজো রব বিজেপির অন্দরে। দু’লক্ষ লোকের জমায়েত করে কী ভাবে বৃহস্পতিবার কলকাতা অচল করে দেওয়া যায়, তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিজেপি নেতারা।
এমনকি, আন্দোলনের রণকৌশল ঠিক করতে সদলবলে দিল্লিও ছুটেছিলেন যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই কর্মসূচি থেকেই বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের।
সূত্রের খবর, আগামী ১৬ এবং ১৭ তারিখ উত্তরবঙ্গ সফরে আসতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিধানসভা ভোটের ‘মহল’ তৈরি করতেই যে অমিতের বঙ্গ-সফর, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যদিও দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, অমিতের রাজ্য সফরের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এ সবের মধ্যেই বুধবার সন্ধ্যায় আচমকা রাজ্য প্রশাসনের তরফে বৃহস্পতি এবং শুক্রবার নবান্ন বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। স্যানিটাইজ করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ, এত ঘটা করে বিজেপির নবান্ন অভিযান এমন দিনে হচ্ছে, যেদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী তো দূর অস্ত্, করণিকরাও আসবেন না। রাজ্য সরকারের এহেন সিদ্ধান্তে স্বভাবতই কিছুটা বিমর্ষ বিজেপির যুব কর্মীরা। কপালে ভাঁজ দলীয় নেতৃত্বেরও। কারণ, কর্মীদের মধ্যে জোশের ঘাটতি দেখা দিলে এই ধরনের ‘আইন অমান্য’ কর্মসূচি সফল হওয়া কঠিন।
তাই কর্মীদের চাঙা বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব প্রচার করছেন, তাঁদের ভয়েই নবান্ন বন্ধ রাখা হচ্ছে। দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখোমুখি হতে পারবেন না বলেই ভয় পেয়ে দপ্তর বন্ধ করে পালিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর কর্মচারীরা। বিজেপির আন্দোলন বলেই স্যানিটাইজারের যুক্তি খাড়া করতে হচ্ছে।
নবান্ন বন্ধ থাকলেও কিছু এসে যায় না।’ নবান্ন বন্ধ থাকলেও বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে আজ শহর উত্তপ্ত হতে পারে বলে অনেকের শঙ্কা। তা নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘প্রশাসন প্রশাসনের ভূমিকা পালন করবে।’
আজ কলকাতা এবং হাওড়া থেকে মোট চারটি বড় মিছিল বের করবে বিজেপি। দলের রাজ্য দপ্তর থেকে বের হওয়া মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন দিলীপ এবং অর্জুন সিংরা। থাকার কথা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে সদ্য বাদ পড়া রাহুল সিনহারও। যদিও তিনি এদিন সন্ধেয় জানান, মিছিলে তিনি থাকবেন কি না, তা ঠিক করেননি। হেস্টিংস-এর দলীয় অফিস থেকে একটি মিছিল বের হবে। তাতে থাকবেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, অরবিন্দ মেনন, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত এবং শঙ্কুদেব পণ্ডারা।
হাওড়া ময়দান থেকে নবান্নের দিকে যাওয়া মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য এবং রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ।
সাঁতরাগাছির মিছিলে থাকবেন সায়ন্তন বসু এবং রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে বন্ধ নবান্নের দিকে যাওয়ার জন্য বিজেপির যুব কর্মীরা আদৌ কতটা কসরত করবেন, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে দলের অন্দরেই।
Be the first to comment