সাড়ে সাত মাসের প্রতীক্ষার অবসান । বুধবার রাত ২টো ৪০ মিনিটে রাজ্যে ফের গড়াল লোকাল ট্রেনের চাকা ৷ হাওড়া থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ল মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে ৷ কোরোনা সংক্রান্ত প্রোটোকল মেনেই চলল ট্রেন ৷ ট্রেনের গায়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকা ৷ বসার আসন চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে ৷
লোকাল ট্রেন ৷ শহর থেকে শহরতলি, গ্রাম থেকে শহরের লাইফ লাইন বলা চলে ৷ কোরোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এই লোকাল ট্রেনের চাকা ৷ স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়েছিলেন নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ৷ তবে ট্রেন ফের চালু হলে বাড়তে পারে কোরোনা সংক্রমণ ৷ সেকথা মাথায় রেখে একগুচ্ছ নিয়ম-কানুন মেনেই রাজ্যে ফের চালু হল লোকাল ট্রেন ৷
নির্দেশিকা আছে ৷ ট্রেনে আসনও নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে ৷ কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতির পরবর্তী লোকাল ট্রেনে কতটা মানা হল সেই নির্দেশিকা? সামাজিক দূরত্বের বা কী হল ? প্রশ্ন ছিল প্রচুর ৷
পূর্ব রেলের অন্যতম ব্যস্ত শাখা শিয়ালদা-বনগাঁ শাখা ৷ সেখানে ছিল পুলিশের কড়া নজরদারি ৷ তবু বজ্র আঁটুনির ফসকা গেরো দেখা গেল সেখানে ৷ এই শাখার সমস্ত স্টেশনে ছিল পুলিশ ও RPF এর টহলদারি ৷ কিন্তু ট্রেন স্টেশনে আসলেই শিকেয় উঠেছে নিয়মবিধি, নির্দেশিকা ৷ আর সামাজিক দূরত্ব ? শব্দটা বোধহয় অভিধানেই ছিল না ৷
টিকিট কাউন্টার ও প্ল্যাটফর্ম চত্বরে সামাজিক দূরত্ববিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চক্র আঁকা হয়েছিল । প্রথম দিকে দূরত্ববিধি মানা হলেও বেলা বাড়তেই সে সব শিকেয় ওঠে । বনগাঁ শাখার গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন বনগাঁ, ঠাকুরনগর, হাবড়া, বারাসত, মধ্যমগ্রাম ও দমদমে সর্বত্র একই ছবি । স্টেশনের প্রবেশপথে থার্মাল চেকিং, স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা ছিল । যাত্রীরা মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন । কিন্তু ব্যস্ত স্টেশনগুলোর টিকিট কাউন্টারের সামনে ছিল ভিড় । মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ববিধি । ট্রেনের ভিতরেও সিটে দু’জন বসার কথা থাকলেও তিন জন বা চারজন বসেছেন । গা ঘেঁষেও বসেছেন অনেকে । ট্রেনে ওঠার আগে প্ল্যাটফর্মের চক্রের উপরে দাঁড়ানোর নিয়মও মানেননি অনেকেই ।
যাত্রীদের মধ্যেও নানা জনের নানা মত ৷ কেউ কেউ বলছেন, ‘‘ কোনও সিস্টেম নেই ৷ এক ঘণ্টা পর একটা ট্রেন ৷ অফিস যেতে এমনই দেরি হয়ে যাচ্ছে ৷ এতদিন পর যখন ট্রেন চালু হয়েছে তাহলে কেন কোনও সিস্টেম তৈরি করা হয়নি ?”
সামাজিক দূরত্বের কথাও উঠে এসেছে অনেকের কথায় ৷ এক যাত্রী বলেন, “কোনও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে না ৷ ট্রেন যেহেতু এক থেকে দুই ঘণ্টা ছাড়া চলছে তাই প্রচুর ভিড় হচ্ছে ৷ এইভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ আরও বাড়বে ৷ যাতায়াত করা যাবে না ৷”
তবে কেউ কেউ খুশি নিউ নর্মালে ট্রেনের নতুন পরিষেবা নিয়ে ৷ এক যাত্রীর দাবি, “শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার লাইনে ভালো মতোই মেনে চলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব ৷ যাত্রী সংখ্যাও কম ।”
বর্ধমানে আবার উঠল অন্য অভিযোগ ৷ যাত্রীদের দাবি, ট্রেনের কামরা ছিল অপরিষ্কার ৷ মাকড়সার ঝুল লেগে আছে কামরাজুড়ে ৷ বসার আসনও পরিষ্কার নয় ৷ অভিযোগ, যাত্রীদের নিজেদেরই কাগজ দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়েছে বসার আসন ৷ তাই স্বাভাবিকভাবে যাত্রীদের থেকে প্রশ্ন উঠছে, আদৌ ট্রেনের কামরা স্যানিটাইজ় করা হয়েছে তো? তবে স্টেশন চত্বর কিন্তু ঝাঁ চকচকে ৷ স্টেশনে করা হয়েছে থার্মাল চেকিংয়ের ব্যবস্থা ৷ টিকিট কাউন্টারেও সামাজিক দূরত্ববিধি মানার জন্য মাইকিং করে যাত্রীদের বারবার উৎসাহিত করা হচ্ছে রেলের তরফে ৷ তবে হাওড়া শাখা বা আসানসোল শাখার ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এলেই সামাজিক দূরত্ববিধি আর মানছেন না কেউই ৷
ব্যান্ডেলে যাত্রীরা মুখে মাস্ক পরেছেন নিয়ম করেই ৷ তবে এখানেও সামাজিক দূরত্ববিধি শিকেয় উঠেছে ৷ ট্রেনের মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেই গন্তব্যে পৌঁছালেন যাত্রীরা ৷ পুলিশ ও RPF টহল দিলেও এই বিষয়ে বাধা দিতে দেখা গেল না কাউকেই ৷
বারাসতের ছবিটা রীতিমতো ভয়ংকর ৷ কোরোনা সংক্রমণকে তোয়াক্কাই করেননি যাত্রীরা ৷ কোরোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে যেরকম পরিস্থিতি দেখা যেত, আজকের ছবিটা দেখে তার কথা মনে পড়তেই পারে ৷ নির্দেশিকা বা সামাজিক দূরত্ব এখানে মানেননি কেউই ৷
এদিকে বাঁকুড়া-খড়গপুর ও বাঁকুড়া-পুরুলিয়া শাখায় ট্রেন চালানোর দাবিতে বাঁকুড়া স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী ও সমর্থকরা । রাজ্যের অন্যান্য রুটে আজ থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও আদ্রা-খড়গপুর ডিভিশনে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মেদিনীপুরের সংযোগকারী রুটে শুরু হয়নি ট্রেন চলাচল ।
Be the first to comment