আমফান ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় CAG তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ এখনও পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত কতজনকে টাকা দেওয়া হয়েছে এবং কতজন টাকা পায়নি, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে CAG-কে তিন মাসের মধ্য়ে রিপোর্ট দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টকে ৷ বিচারপতি TBN রাধাকৃষ্ণণ ও অরিজিৎ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই নির্দেশ দেয় ৷
চলতি বছরের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা। ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ২০ হাজার টাকা করে সাহায্য়ের কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য় সরকার ৷ তবে, অভিযোগ উঠেছিল ক্ষতিপূরণের সেই টাকা আসল ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে ঢুকেছে ৷ সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বহু মানুষ এই দাবিতে গত ৩ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন কাকদ্বীপের বাসিন্দা খয়রুল আনম শেখ নামে এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমফানে, কিন্তু তিনি কোনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন আদালতে । পাশাপাশি আরো চার-পাঁচটি মামলা একই দাবিতে দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
আদালতে মামলা হওয়ার পর রাজ্য সরকারের তরফে ৬ ও ৭ অগাস্ট আবেদনপত্র জমা নেওয়ার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয় ৷ করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে ওই দু’দিন মানুষ আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্লক অফিসে জমায়েত করে ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই আবেদন নেওয়া বন্ধ করে দেয় ৷ এমনকি পুলিশ দিয়ে আবেদনকারীদেরকে জোরকরে হটিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
সেই মামলাগুলির শুনানিতে, রাজ্য় সরকারের কাছে বারবার আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে টাকা বণ্টন করা হচ্ছে, তা জানতে চেয়ে হলফনামা জমা দিতে বলে আদালত ৷ ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা বণ্টনে যে দুর্নীতি হয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়ে একাধিকবার রিপোর্ট তলব করে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের তরফে মামলার শুনানিতে হাজির ছিলেন না কেউ।
এরপর ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের সচিবকে অক্টোবর মাসে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন ৷ সঙ্গে জানতে চান, কেন এতদিনেও আমফানের টাকা বন্টন নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে পারেনি রাজ্য় সরকার? প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল, এখন পর্যন্ত কতজন মানুষ আম্ফান ক্ষতিপূরণ পেয়েছে? তার বিস্তারিত বিবরণ সহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে রাজ্যের ওয়েবসাইটে।
পাশাপাশি আবেদন করা সত্ত্বেও, যারা এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি তাদের চিহ্নিত করতে বলা হয়। কিন্তু, মামলার শুরু থেকেই রাজ্যের তরফে তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। ফলে রাজ্যের আচরণে অসন্তুষ্ট ছিল আদালত। এরপরই আজ CAG তদন্তের নির্দেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় এই সংস্থাকে যাতে রাজ্য সরকার সমস্ত রকমের সহযোগিতা করে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে । আগামী ৩ মাসের মধ্য়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করতে হবে CAG-কে ৷
মামলাকারীদের তরফের আইনজীবী শমীক বাগচী ও নুর ইসলাম শেখ জানান, প্রায় চার হাজারের বেশি আবেদনকারীর হয়ে মামলা করেছিলেন তাঁরা । আদালতে উল্লেখ করেছিলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা পুজোর আগে পর্যন্ত কিছু টাকা পাচ্ছিলেন ৷ কিন্তু পুজোর পর এই ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে । এই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে CAG তদন্ত যেমন চলবে ৷ পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে রাজ্য সরকারকে।
Be the first to comment