‘কান ধরে হিন্দি শিখিয়ে দেব’, নাম না করে মোদীকে আক্রমণ মমতার

Spread the love

হিন্দি ভাষা নিয়ে নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর কটাক্ষ, কান ধরে হিন্দি শিখিয়ে দেব ৷ বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে হিন্দি ভাষীদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ সেখানেই তিনি এই কথা বলেন ৷ একই সঙ্গে একাধিক ইশুতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির সমালোচনা করেছেন এদিন ৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন কোনও জনসভায় ভাষণ দেন, তখন সামনে টেলিপ্রম্পটার রাখা থাকে৷ এদিন সেই বিষয়টি তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তবে একবারও তিনি প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করেননি ৷ শুধু বলেছেন, আমি হিন্দি ভালোভাবে পড়তে পারি ৷ ওরা পড়তে পারে না৷ গুজরাতিতে লেখা থাকে৷ টেলি প্রম্পটার দেখে পড়ে ৷

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী গুজরাতের ভূমিপুত্র৷ গুজরাতি ভাষায় তিনি অন্য অনেকের চেয়ে বেশি সড়গড়৷ ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে মমতা প্রধানমন্ত্রীকেই নিশানা করেছেন৷ আর এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছেন, কান ধরে হিন্দি শিখিয়ে দেব ৷ আর তিনি যে ভালো হিন্দি বলতে পারেন, তা বোঝাতে এদিনের অনুষ্ঠানে আগাগোড়া হিন্দিতে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি একটি কাগজ তুলে ধরে হিন্দিতে লেখা পড়ে শোনান ৷

তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি ভাষী-সহ অন্য ভাষাভাষিদের জন্য তিনি কী করেছেন, সেই কথাও এদিন তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানিয়েছেন যে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর হিন্দি ভাষীদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে তৃণমূল ৷

মমতা এদিন কৃষক বিক্ষোভ নিয়েও মুখ খুলেছেন ৷ তাঁর দাবি, কৃষকদের আন্দোলন অপচ্ছন্দ হলেই কাউকে জঙ্গি বলা উচিত নয় ৷ ২০ লাখ লোক গিয়েছিল দিল্লির আন্দোলনে ৷ সেখানে ছোটোখাট ঘটনা ঘটতেই পারে বলে মমতা এদিন দাবি করেছেন ৷ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, কৃষকরা বিশৃঙ্খলা করেছে বলে যা ছড়ানো হচ্ছে, তা ঠিক নয় ৷ কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন ৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এত ঔদ্ধত্য এর আগে কোনও সরকারের ছিল না৷ এমন সরকার আগে দেখিনি ৷ তাই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে ৩০০ সাংসদ নিয়ে বিজেপির এত ঔদ্ধত্য কেন?

হিন্দিভাষী সঙ্গ দিদি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু অংশ, ২৮ জানুয়ারি, ২০২১:

  1. আমি বাধিত যে আপনারা আমার আমন্ত্রণে এসেছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় যে আমরা ভাষার ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করি না। আমরা মানুষকে তাদের ভাষার জন্য বিচার করি না আমরা কেবল মানুষকেই দেখি
  2. আজ পাঞ্জাবের কৃষকরা লড়াই করছেন, আমরা তাদের সাথে রয়েছি, আজ রাজস্থানীরা, জাঠরা লড়ছেন, আমরা তাদের সাথে রয়েছি, হরিয়ানার লোকেরাও লড়াই করছেন, আমরা তাদের সাথে আছি। আজ পাঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানা, বিহার, উত্তরপ্রদেশের লোকেরা বিজেপির বিরুদ্ধে যাচ্ছে এবং বাংলার মানুষ সর্বদা তাদের বিপক্ষে ছিল। সবাই বিজেপি ছেড়ে দিলে তারা কাকে ধরে রাখবে?
  3. আমার বিহারী, পাঞ্জাবী, রাজস্থানী, উত্তর প্রদেশের ভাই বোনেরা, বলুন তো আপনাদের এই বাংলায়, তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের আমলে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়েছে? আমি কিন্তু হিন্দি পড়তে পারি।
  4. আমরা হিন্দি, কুরমি, উর্দু ভাষাকে মান্যতা দিয়েছি বাঙালিদের যদি বাংলা ভাষা শেখার অধিকার থাকে তাহলে অন্যান্য ভাষারও একই অধিকার আছে।
  5. বিজেপি এখন বাঙালি – অবাঙালি এই ঘৃণ্য রাজনীতি করছে কারণ ওরা জানে আর হিন্দু – মুসলিমে কাজ হবে না।
  6. পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি সর্বপ্রথম তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারই দেয়। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার পবিত্র ছট পূজা উপলক্ষ্যে দুইদিন ছুটি এবং হোলির জন্য একদিন ছুটি ঘোষণা করে। আমরা হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ স্থাপন করেছি, আমরা ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দিচ্ছি এবং জীবনে সফল হতে সাহায্য করছি, ভবিষ্যতে আরও কাজ করব। আমাদের উপর ভরসা রাখুন।
  7. আমার খুব খারাপ লাগলো এটা দেখে যে আজ এই বাংলায় হেমন্ত সোরেন রাজনীতি করতে এসেছেন, কিন্তু ওঁর উচিত আগে ঝাড়খণ্ড সামলানো। উনি নিজের দলের জন্যে প্রার্থী খুঁজতে এসছেন। আমরা মানুষকে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাদ্য দিই, আর উনি শুধু ভোট চাইতেই এসেছেন। এইসব চলবে না।
  8. গোটা দেশ থেকে মানুষ এই বাংলায় আসেন। বাংলা একটা বড় পরিবার, আমরা সবাই মিলেমিশে একসাথে থাকি।
  9. আমরা যদি একসাথে কাজ করতে পারি সারা বছর তাহলে ভোটের সময় কেন ভোট ভাগ হবে? রাস্তায় চায়ের দোকানে, বাজার হাটে, পাড়ায় মানুষের সাথে কথা বলুন। রাস্তায় সবার সাথে কথা বলুন। ছোট ছোট দল বানিয়ে কথা বলুন। এখন আপনারা আপনাদের কাজ করুন, নির্বাচনের পর আমরাই ৩৬৫ দিন আপনাদের কাজ করব। আমরা সর্বস্ব দিতে প্রস্তুত।
  10. দিদি মরে যাবে কিন্তু নিজের দেওয়া কথা কখনও ব্যর্থ হতে দেবে না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*